অনলাইন ডেস্ক:
১৯৮০ দশকের কথা। কালিয়াকৈরে দুজন মানুষ সাংবাদিকতা করতো। দৈনিক ইত্তফাকে বাবু অাশুতোষ পাল (সাবেক প্রধান শিক্ষক, ভৃঙ্গরাজ তালেবাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়), দৈনিক বাংলার বাণীতে অাব্দুল মান্নান শরীফ (অাওয়ামীলীগ নেতা)। ১৯৮৩/৮৪ সনে কালিয়াকৈর বাজারস্থ গোলামনবী স্কুলে পড়াকালীন সময়ে অামার ছড়া/কবিতা/গল্প লেখায় হাতেখড়ি। মাসিক অভিব্যক্তি (গাজীপুব), মাসিক শিশু (বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সরকারী পত্রিকা) সহ অারো পত্রপত্রিকায় অামার লেখা ছাপা হতো।১৯৮৫/৮৬ সনে অামরা বন্ধু বান্ধব মিলে কয়েকটা সংকলন প্রকাশ করি। লেখালেখি/ সংকলন প্রকাশের সুত্র ধরেই বাবু অাশুতোষ পাল ও মান্নান শরীফের সাথে অামার পরিচয়। অাশুতোষ পালে উৎসাহে তখন অামরা জাতীয় শিশু কিশোর সংগঠন কচিকাঁচার মেলা কালিয়াকৈর শাখা গঠন করি। অামাদের কার্যক্রমের বিভন্ন সংবাদ দৈনিক ইত্তেফাক/ সাপ্তাহিক পুর্বাণীতে ছাপা হতো। ওই সময় মান্নান শরীফ বাংলাদেশ অাওয়ামীলীগ, কালিয়াকৈর উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদকের দায়িত্বে থাকায় সাংবাদিকতায় খুব বেশী সময় দিতেন না। অাশুতোষ পাল স্কুল ছুটির পর প্রতিদিন কালিয়াকৈর বাজারে এসে অামাদের খুজে বের করে বিভিন্ন তথ্য/ সংবাদ জানতে চাইতেন। অনেক সময় তিনি বলতেন কালিয়াকৈরে সাংবাদিক কম, তোমরা সাংবাদিকতা শুরু করো। এভাবে অাশুতোষ পাল স্যারের উৎসাহ/ অাগ্রহেে তৎকালীন "দৈনিক দেশ" পত্রিকার মাধ্যমে অামার সাংবাদিকতা শুরু। তখন কালিয়াকৈরে মনসুরুল হক মনি ভাই দৈনিক নব অভিযান পত্রিকায় কিছুদিন সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলেন। অাশুতোষ স্যারের কাছে শুনেছি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন মুলক কাজ সহ নানা প্রয়োজনে কালিয়াকৈরে সাংবাদিক সংগঠন দরকার। কিন্ত মাত্র ৩/৪ জন সাংবাদিক দিয়ে কিভাবে প্রেসক্লাব/ সংগঠন হবে? অাশুতোষ পাল স্যার সমাধান বের করলেন। পার্শ্ববর্তী মির্জাপুর উপজেলার সাংবাদিকদের সদস্য করা হবে। কারন তখন মির্জাপুরেও কোন সাংবাদিক সংগঠন/প্রসক্লাব ছিলো না। সেমতে ১৫/০৭/১৯৮৬ কালিয়াকৈর বাজারস্থ তৎকালীন ডাকবাংলো ভবনে অাশুতোষ পাল ও অাব্দুল মান্নান শরীফের যৌথ স্বাক্ষরে কালিয়াকৈর প্রেসক্লাব গঠন কল্পে এক সভা অাহবান করা হয়। সভায় কালিয়াকৈর থেকে উপস্থিত থাকেন, অাশুতোষ পাল, মান্নান শরীফ, মনসুরুল হক মনি, অধ্যাপক অাফজাল হোসেন ( কালিয়াকৈর ডিগ্রি কলেজের তৎকালীন ইংরেজীর প্রভাষক ও লেখালেখি করতেন), অামি অাইয়ুব রানা। মির্জাপুর থেকে উপস্থিত ছিলেন কিসমত খন্দকার (দৈনিক খবর), দূর্লভ বিশ্বাস ( দৈনিক অাজকের বাংলাদেশ), বিবেকানন্দ চক্রবর্তী (দৈনিক জাহান)। সভায় অাশুতোষ পাল অাহবায়ক ও মান্নান শরীফ সদস্যসচিব এবং উপস্থিত সকলকে সদস্য করে একটি অাহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। তখন প্রেসক্লাবের কোন অফিস ছিলো না। অামি ও অাশুতোষ স্যার পরামর্শ করে গোলামনবী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের পশ্চিম পাশে তৎকালীন উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার ভবনে একটি সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে রাখি। কারন ক্রীড়া সংস্থার তেমন কোন কার্যক্রম ছিলোনা। ভবনটি ছিলো স্থানীয় তুরাগ স্পোর্টিং ক্লাবের তত্বাবধানে। তুরাগ ক্লাবের সাথে অামরাও জড়িত ছিলাম। সেই সুবাধে ওই ভবনে কিছুদিন অামাদের তুরাগ কচিকাঁচার মেলার অফিস ছিলো। পরে অাবার কিছুদিন কালিয়াকৈর প্রেসক্লাবের কাজ নিস্ক্রীয় থাকে। এরপর অনেকেই কালিয়াকৈরে সাংবাদিকতায় অাসে। অনেকেই অাশুতোষ পালের সাথে যোগাযোগ করেন। স্যার অামাকে কালিয়াকৈর বাজারে বসার একটা ব্যবস্থা করার কথা বলেন। স্যার জানান, সরকারী বিভিন্ন তালিকায় কালিয়াকৈর প্রেসক্লাবের সভাপতি হিসেবে অাশুতোষ পাল অার সাধারন সম্পাদক হিসবে অামার নাম রয়েছে। ১৯৯০ সনে অনেক সাংবাদিক একটা বসার জায়গা অভাববোধ করেন। অামরা কালিয়াকৈর বাজারস্থ জেলা পরিষদের অব্যবহৃত ভবনের একটি কক্ষ বরাদ্ধ নেয়ার চিন্তা করি। সাধারন সম্পাদক হিসেবে অামি অাবেদনপত্রে স্বাক্ষর করি। তৎকালীন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জনাব হাসান উদ্দিন সরকারের সাথে জয়দেবপুরে জেলা পরিষদ কার্যালয়ে দেখা করি। অামরা প্রেসক্লাবের জন্য ভবনটি ব্যবহারের মৌখিক অনুমোদন পাই। সেদিন অামরা যারা হাসান উদ্দিন সরকারের সাথে দেখা করি তাদের মধ্যে যাদের নাম মনে পড়ছে তারা হলেন, সরকার দলীল উদ্দিন অাহমেদ (দৈনিক সংগ্রাম, বর্তমানে পৌর সচিব), সরকার অাব্দুল অালীম (দৈনিক বাংলার বাণী, বর্তমানে দৈনিক যুগান্তর), অাব্দুল কুদ্দুস (দৈনিক খবর, বর্তমানে প্রধান শিক্ষক, ওয়ারী উচ্চ বিদ্যালয়), অাব্দুস সালাম রানা (দৈনিক জনতা, বর্তমানে শ্রীপুর উপজেলায় দৈনিক ভোরের কাগজ/ ৭১ টিভিতে কর্মরত), অামি ও অাশুতোষ পাল। অামি নিজে পত্রিকা প্রকাশের কাজে জড়িয়ে যাই। ব্যস্ততার কারনে অামি সময় দিতে পারি না। এরকিছু দিন পর কালিয়াকৈর প্রেসক্লাবের নতুন কমিটি করা হয়। অাশুতোষ পাল সভাপতি, সরকার দলীল উদ্দিন অাহমেদ সাধারন সম্পাদক। ১৯৯৩ সনে অামি পাক্ষিক সুবাণী প্রকাশের অনুমোদন পাই। ১৯৯৪ সনে অর্ধসাপ্তাহিক সুবাণী রুপান্তর করি। ১৯৯৪ সনেই সরকারি লাইসেন্স নিয়ে সুবাণী প্রিন্টার্স নামে ছাপাখানা স্থাপন করি। অামার ব্যস্ততার কারনে প্রেসক্লাবে সময় দিতে পারি নাই। এভাবেই চলতে থাকে অনেক দিন। ১৯৯৬ সনে রাজনৈতিক কারনে কিছুটা বিবেদ তৈরী হয়। একটা রাজনৈতিক মতাদর্শের দৃষ্টিকোন থেকে একটি পাল্টা কমিটি গঠিত হয়। পরে ১৯৯৮ সনে সর্বসম্মতি ক্রমে অামি সভাপতি সরকার অাব্দুল অালীম সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হই। তখন অামরা গোলামনবী স্কুলের হলরুমে অভিষেক অনুষ্ঠান করি। অনুষ্ঠানে তৎকালীন সাংসদ এডভোকেট রহমত অালী চিফ গেষ্ট ছিলেন, স্পেশাল গেষ্ট ছিলেন, তৎকালীন গাজীপুর পৌরসভার মেয়র অাজেকের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী অালহাজ্ব এড. অা. ক. মোজাম্মেল হক। সেদিনের বিশেষ অাতিথি অামাদেরকে একটা স্টিলের অালমারী গিফট করেছিলেন। বলতে গেলে সেই উপহারই ছিলো কালিয়াকৈর প্রেসক্লাবের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি। তখন তিনি কালিয়াকৈরের কোন দায়িত্বে না থেকেও প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে অামাদেরকে উৎসাহিত করেছেন। অার কালিয়াকৈরের মানুষের কাছ থেকে তেমন কোন গুরুত্ব পাইনি। শুধু মাত্র এই একটি কারনে অামি অাজীবন অালহাজ্ব এড অা. ক. ম. মোজ্জামেল হকের কাছে চীরদিন কৃতজ্ঞ থাকবো। ২০০১ সনে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অামাকে ও সরকার অালীমকে ভযভিতি, হুমকী দেয়া হয়। বিভিন্ন জাতীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। বাধ্য হয়ে অামি থানায় জিডি করি। এরপর প্রেসক্লাবে কিছুটা দলাদলি/ গ্রুপিং শুরু হয়। অামার কাছে সাংবাদিকতায হাতেখড়ি ও অামার ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত ২/১ জন গোপনে অামার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। রাগে দু:খে ক্ষোভে অামি কালিয়াকৈর প্রেসক্লাব ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। মুলত: অামি অার সরকার অালীম দায়িত্ব ছাড়ার পর পরে প্রেসক্লাবের তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতাদের ব্যক্তিগত উন্নয়ন হয়েছে। অনেক ধান্ধাবাজ/ অপ/ হলুদ সাংবাদিকের জন্ম হয়েছে।কিন্ত অামি প্রেসক্লাব বিষয়ে কোন চিন্তা ভাবনা করি নাই। অামার অর্ধ সাপ্তাহিক সুবাণী নিয়েই কাজ করেছি। ২০১৩/১৪ সনে প্রেসক্লাবের নামে বরাদ্ধ টিঅার চাউল নিয়ে এক কেলেংকারি হয়। অামার স্নেহভাজন দৈনিক জনতার সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম এর প্রতিবাদ করলে শহিদুলের সাথে তৎকালীন প্রেসক্লাব নেতাদের হট্রগোল শুরু হয়। শহিদুল ইসলাম সাংগঠনিক ভাবে ভালো মানুষ। তাই শহিদুলকে সমর্থন যোগাতে অাবার অামাকে প্রেসক্লাব নিয়ে ভাবতে হয়। অনেকেই অামার সাথে যোগাযোগ করে। যেহেতু প্রেসক্লাবে কোন নিয়মনীতি নেই। অামার অাহবানে কালিয়াকৈরে কর্মরত সংখ্যা গরিষ্ঠ সাংবাদিক সাড়া দেয়। কিন্ত অামি মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিকতা করি না। নিউজ প্রাপ্তির সমস্যা বিবেচনায় এনে অনেকেই অামার সাথে প্রকাশ্যে সমর্থন যোগাতে অনিহা প্রকাশ করে। শহিদুল ইসলাম, ইমারত হোসেন, হুমায়ুন কবীর, জাহাঙ্গীর অালম প্রমুখের প্রতিবাদ এবং সরকার অাব্দুল অালীম, এম মাহবুব হাসান মেহদী গং এর মৌন সর্মথনে সর্ব সম্মতিক্রমে ২০১৬ সনে অামাকে সভাপতির দায়িত্ব নিতে হয়। সাধারন সম্পাদক হোন এম. তুষারী। এরপর ২০১৭ সনের নভেম্বরে অামার সমস্যার কথা প্রায় সকলেই অবগত। সে বিষয়ে অামার কারো প্রতি কোন অভিযোগ নেই। সবই অামার ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। সারাজীবন মানুষের পাশে থেকেছি, মানুষের জন্য কাজ করেছি। এখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতীরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অাদর্শ বুকে ধারন করে দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি। ২০১৯ সনে কালিয়াকৈর প্রেসক্লাবের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। অামাকে পুনরায় সভাপতি পদে অধিষ্ট করে কালের কন্ঠ সাংবাদিক মাহবুব হাসান মেহদীকে সাধারন সম্পাদক করা হয়। অামাকে অাবার সভাপতি পদে অধিষ্ঠ করায় অামার দায়িত্ব বেড়ে যায়। অামি প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই কালিয়াকৈর প্রেসক্লাবের নিজস্ব স্থায়ী ভবন প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছি। কিন্ত সাংগঠনিক স্বপ্ন বাস্তবায়নে সঠিক যোগ্য পরিষদ না থাকলে একার পক্ষে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এবার প্রেসক্লাব ভবন নির্মানের সেই লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ের সুযোগ অাসে। অামি অামাদের সাংসদ মাননীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী এড. অা. ক. ম মোজাম্মেল হক সাহেবের সাথে কথা বলি। তিনি সম্মতি দেন। এরপর অামরা নতুন কমিটির সদস্য বৃন্দ মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় করে মতবিনিময় সভায় মিলিত হই। তিনি অামাদের জমি নির্বাচনের পরামর্শ দেন। তারই ফলশ্রূতিতে গত ৬ নভেম্বর কালিয়াকৈর প্রেসক্লাব ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন মাননীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধের মহানায়ক এড. অা. ক. ম মোজাম্মেল হক এমপি। ইতোমধ্যে অামাদের ভবনের কাজ প্রায় অর্ধেক উত্তোলন হয়ে গেছে। অামাদের সংগঠনের বাইরে কতিপয় সাংবাদিক সারা দিন বনের জমিতে বসবাসরত গরীব অসহায় মানুষের পিছনে লেগে থাকে। এরা প্রভাবশালী অবৈধ দখলদার শিল্পকারখানার বিরুদ্ধে দু কলম লিখতে পারেনা। কিন্ত অসহায় মানুষকে ভযভীতি দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এদের কোন বিবেক বিবেচনা নাই। কিন্ত সাধারন মানুষ ক্ষেপে গেলে এদের কি হবে? সাধারন মানুষ যদি এদের বিরুদ্ধে চাদাবাজি/ মানহানী/ হয়রানীর অভিযোগ এনে মামলা করে? তাহলে এদের নেতারা কি বাচাঁতে পারবে। অাবার প্রশ্ন অাসে নেতাদের যদি কেউ কিছু বলে, তারা নিজেরাই কি বাচঁতে পারবে? সবায় অামরা কালিয়াকৈরবাসী? সকলের হাড়ির খবর সকলেই জানে। তা নয় কি? কার কতটুকু মুরদ অাছে, ক্ষমতা অাছে সেটা মানুষ বুঝে/ জানে। পাবলিক যেদিন ক্ষেপে যাবে, সেদিন কারো রক্ষা নাই। জয়গুরু।
সূত্র: কালিয়াকৈর প্রেসক্লাবের সভাপতি আইয়ূব রানার ফেসবুক ওয়াল থেকে।