বরগুনা প্রতিনিধি: বরগুনার আমতলীতে চাঞ্চল্যকর ফারিয়া ইসলাম মালা নামের এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার পর ৭ টুকরা করার দায়ে একজনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।
একই সঙ্গে এ মামলার এক আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অপর আসামির ৭ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া একজনকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়।
রোববার বরগুনার নারী ও শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ আদেশ দেন।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন নিহত কলেজছাত্রী মালার মামাতো ভগ্নীপতি প্রেমিক আলমগীর হোসেন পলাশ। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন পলাশের ভাগ্নিজামাই আমতলী পৌরসভার হাসপাতাল সড়কের বাসিন্দা আইনজীবী মাইনুল আহসান বিপ্লব। সাত বছর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন আইনজীবী মাইনুল আহসানের সহকারী রিয়াজ।
একমাত্র নারী আসামি আইনজীবী মাইনুল আহসানের স্ত্রী ইমা রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।
এ ছাড়াও একই আদেশে বিচারক মো. হাফিজুর রহমান লাশ লুকানো চেষ্টার অপরাধে বিপ্লব ও পলাশের ৭ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেছেন।
পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা সদর উপজেলার গুদিঘাটা গ্রামের মো. মান্নান খানের কন্যা মালা আকতারের সঙ্গে পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার মজিদবাড়িয়া ইউনিয়নের বাসোন্দা গ্রামের আবদুল লতিফ খানের ছেলে আলমগীর হোসেন পলাশ প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। মালা সম্পর্কে আলমগীর হোসেন পলাশের মামাতো শ্যালিকা।
২০১৭ সালের ২১ অক্টোবর সন্ধ্যায় আলমগীর হোসেন পলাশ প্রেমিকা মালাকে নিয়ে আমতলী তার (পলাশ) আত্মীয় অ্যাডভোকেট মাইনুল আহসান বিপ্লবের বাসায় বেড়াতে আসে। তিনদিন ধরে পলাশ এ বাড়িতে অবস্থান করে।
২৪ অক্টোবর মালা পলাশকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। কিন্তু পলাশ এতে রাজি হয়নি। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায় ওইদিন দুপুরে আলমগীর হোসেন পলাশ ও তার ভাগ্নিজামাই আইনজীবী মাইনুল আহসান বিপ্লব মালা আকতারকে ধারালো অস্ত্র (বটি) দিয়ে কুপিয়ে সাত টুকরো করে। পরে ওই বাসার বাথরুমের মধ্যে দুটি ড্রামে ভরে রাখে।
ওইদিন পুলিশ ঘাতক পলাশকে গ্রেফতার করে। ২৫ অক্টোবর ঘাতক পলাশ মালাকে হত্যার কথা আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকার করে।
এ রায়ের খবর আমতলীতে পৌঁছলে সাধারণ মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা দ্রুত এ রায় কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন।
নিহত মালার মামা হাবিবুর রহমান খান রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, দ্রুত এ রায় কার্যকরের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাই।
বরগুনার নারী ও শিশু আদালতের পিপি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, মালা হত্যা মামলায় আসামি পলাশকে ধর্ষণ, হত্যা এবং লাশ গুম করার অপরাধে ফাঁসির আদেশের পাশাপাশি সাত বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেছেন বিচারক। অপর আসামি আইনজীবী বিপ্লবের বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং লাশ গুমের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৭ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেছেন আদালত। আর মইনুল হোসেন সহকারী রিয়াজের বিরুদ্ধে লাশ গুমের সহায়তা করার অপরাধে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
এ মামলার মইনুল হোসেনর স্ত্রী ইমা রহমানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন বলে জানান পিপি।
আসামিপক্ষের আইনজীবী হুমায়ুন কবীর বলেন, আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। তাই আমরা উচ্চআদালতে যাব।