প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের প্রতিবাদ করায় হত্যা করা হয় নাছিরকে - Meghna News 24bd

সর্বশেষ


Thursday, January 23, 2020

প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের প্রতিবাদ করায় হত্যা করা হয় নাছিরকে

নিহত নাছির
কুমিল্লা প্রতিনিধি: কুমিল্লার চান্দিনায় মহাসড়কে দোকানির ছিন্নভিন্ন লাশ উদ্ধারের ১০ দিন পর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। চা দোকানি নাছিরকে টাকার জন্য নয়, প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের প্রতিবাদ করায় হত্যা করা হয়। পুলিশ মোয়াজ্জেম হোসেন (২৫) এবং অটোরিক্সা চালক সানাউল্লাহকে (২৪) আটকের পর এ তথ্য জানান নিহত নাছিরের বাবা রবিউল্লাহসহ পুলিশের একাধিক সূত্র।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মোঃ নূরুল ইসলাম এ হত্যার রহস্য উন্মোচন করেন।
গত ১৩ জানুয়ারি সকালে ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা থেকে নাছির উদ্দিনের ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন লাশ অংশ উদ্ধার করে হাইওয়ে পুলিশ।
এ ঘটনাকে পুলিশ সড়ক দুর্ঘটনা বলে সন্দেহ করলেও নিহতের বাবা রবিউল্লাহ দাবি করেন তার ছেলেকে খুন করা হয়েছে। প্রমাণ হিসেবে তিনি দোকানে রক্তের চিহ্ন দেখান পুলিশকে।
চান্দিনা থানা পুলিশও নাওতলা মাদ্রাসা এলাকায় মহাসড়ক সংলগ্ন ওই চা দোকানের কয়েকটি স্থানে ও কম্বলে ছোপ-ছোপ রক্তের দাগ দেখেন। রাতে নিহতের বাবা অজ্ঞাতনামাকে আসামি করে চান্দিনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে এলাকায় নানা রকম গুঞ্জন সৃষ্টি হয়। কেউ বলেন পার্শ্ববর্তী এক দোকানদার নাছির উদ্দিনের বাবার কাছে টাকা আমানত রেখে যান। আর রাতে ওই টাকা লুটে নেয়ার জন্য নাছিরকে হত্যা করা হয়। আবার কেউ বা বলেন হয়তো রাতে কোন ক্রেতার সাথে ঝামেলার ওই ঘটনা ঘটে। এদিকে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে মাঠে নামে চান্দিনা থানা পুলিশসহ জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), সিআইডি ও পিবিআই।
পুলিশের দাবি ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে গতকাল বুধবার দুপুর ২টায় চান্দিনা এলাকা থেকে মোয়াজ্জেমকে আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ। এবং তার দেয়া তথ্যমতে জানা যায় সানাউল্লাহ ও মোয়াজ্জেমই তাকে হত্যা করে। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পর যাতে কেউ সন্দেহ করতে না পারে সেজন্য তারা এলাকা ছাড়েনি। পরে রাতে ৮টায় চান্দিনার নাওতলা এলাকা থেকে ঘটনার মূল হোতা অটোরিক্সা চালক সানাউল্লাহ (২৪) আটক করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সানাউল্লাহ পেশায় একজন অটোরিকশা চালক। গত ৭ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে সানাউল্লাহ সহ ৪/৫ জন মিলে পার্শ্ববর্তী বাড়ির ১৫ বছর বয়সী এক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণ করে। বিষয়টি দেখে বাঁধা দেয় নাছির। ধর্ষণের পর কিশোরী হাসপাতালে ভর্তি থাকে। আর ধর্ষক সানাউল্লাহ প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। প্রতিবন্ধীর বাবার সামাজিক মর্যাদার কারণে মামলা না করে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে।
ধর্ষক সানাউল্লাহ গত ১২ জানুয়ারি বিকালে নাছির উদ্দিনের দোকানে এলে নাছির উদ্দিন প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণ করেও কিভাবে এলাকায় ঘুরছে- এমন প্রশ্ন করলে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে সানাউল্লাহ। এসময় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। সবার সামনে নাছির উদ্দিন সানাউল্লাহকে এসব কথা বলায় ক্ষুব্ধ হয়। সানাউল্লাহ রাতে মোয়াজ্জেম নামে অপর একজনকে সাথে নিয়ে প্রতিশোধ নিতে আসে নাছিরের দোকানে। দা দিয়ে নাছিরকে কয়েকটি কোপ দেয় সানাউল্লাহ। নাছির জীবন বাঁচাতে দৌড়ে মহাসড়ক পারাপারের সময় গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হন। নাছিরের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর রক্তমাখা দা ধুয়ে দোকানে রেখে পালিয়ে যায় তারা। সারা রাত গাড়ির চাকার সাথে নাছিরের লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে মহাসড়কের দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) সাখাওয়াত হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আজিমুল আহসান, নাজমূল হাসান রাফি, চান্দিনা থানা অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোঃ আবুল ফয়সল প্রমুখ।
উল্লেখ্য, রোববার (১২ জানুয়ারি) রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নাওতলা আলিম মাদ্রাসা সংলগ্ন একটি মার্কেটে নৈশ প্রহরীর কাজ করতেন নাওতলা গ্রামের রবিউল্লাহ। ওই মার্কেটে চা দোকানের ব্যবসা করতেন তার ছেলে নাছির উদ্দিন। রাতে রবিউল্লাহ শারীরিক অসুস্থতার কারণে নৈশ প্রহরীর দায়িত্ব পালন করে ছেলে নাছির উদ্দিন। রাতের কোনো এক সময়ে হত্যাকারীরা তার উপর হামলা চালায়।

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages