ডেস্ক নিউজ: বছর যায় বছর আসে ওরা কেউ আসলো না। কাঁদতে কাঁদতে বলছিলো ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি নিষ্পাপ ১৪ বছরের কিশোরী ফেলানীর মা জাহানারা বেগম। তিনি আরো বলছিলেন, ফেলানীকে যখন নৃশংসভাবে হত্যা করে কাঁটা তারে ঝুলিয়েছিল তখন আমার অন্যান্য সন্তানদের নিয়ে জীবিকার তাগিদে ভারতে ছিলাম। তিন দিন পর ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ফোনে আমাকে খবর দেয় ফেলানী পৃথিবীতে আর নেই। সেই দুঃসংবাদ আমার জীবনে আজও সবচেয়ে কষ্টের মধ্যে চলছে। তিনি আরো বলেন, ৩৯ দিন পর বাংলাদেশ ভারতের ফ্ল্যাগ মিটিং করে আমাকে বাংলাদেশে আসতে হয়েছিল। তখনই আমি ফেলানীর খবর দেখেছিলাম। আমি আসার আগেই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন আমার বাড়িতে এসে আমার মা ফেলানীর কবরের পাশে দাড়িয়ে ওয়াদা করেছিল আমার অন্যান্য সন্তানদের তিনি দেখবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমার সন্তানদের লেখাপড়ার যাবতীয় খরচ বহন করা হবে। মাসের পর বছল এলো, বছর ঘুরে বছর গেল আজ ৬ বছর শেষ হয়ে সাত বছরে পা রাখলো কিন্ত কেউ আমার বাড়িতে এসে কোন খবর নিল না। কাঁদতে কাঁদতে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের কাছে আমার একটাই দাবি আমার ফেলানী হত্যার বিচার চাই। আর যাতে কেউ কাঁটা তারে ঝুলে না মরে। তিনি দাবি করেন গুলশানের লিংক রোড যেন ফেলানী রোড হয়। ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার ফেলানীর বিচার আমি বেঁচে থাকতে দেখতে পারবো না। তিনি উপস্থিত সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি কাঁদতে কাঁদতে আরো বলেন, ভারতের বিএসএফ অমিয় ঘোষের আমি ফাঁসি চাই। উপস্থিত সবাই ফেলানী হত্যার বিচারের জন্য প্রতিবাদ মুখর ছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে আমিও বলেছিলাম যতদিন বর্তমান ভোটার বিহীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকবে ততদিন ফেলানী হত্যার বিচার হবে না। ভারত থেকে হাজার হাজার ফেনসিডিল আসবে, মাদক আসবে তাদের কিছু হবে না কিন্তু আমাদের কৃষকদের হত্যা করবে আমাদের সরকার প্রতিবাদও করবে না। তারা ক্ষমতার জন্য নিজেদেরকে খুচরা মূল্যে বিক্রি করে দিয়েছে। ভারত হাইকোর্টে বিচার চলছে কিন্তু ফেলানীর বাবা সেই বিচারের তারিখ জানে না জানে না ফেলানী কবে জন্মগ্রহণ করেছিল তার সঠিক তারিখও। কত নিরীহ সাদামাঠা জীবনের অধিকারী হলে এমন হয় তা বলার অপেক্ষাই থাকে না। ফেলানীর মৃত্যুর পরও ৩ ছেলে ২ মেয়ে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। তাদের পাশে আসলে কেউ নেই। এভাবে আর কত ফেলানীর প্রতিবাদ আমরা করবো। বন্ধুবেশী শত্রুদেরকে একের পর এক সব ছাড় দিয়ে দিব আর আমাদের গুলি করে পাখির মত হত্যা করবে আমরা প্রতিবাদও করতে পারবো না। ফেলানী হত্যার বিচারের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জাতিসংঘে হস্তক্ষেপ কামনা করতে হবে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার যদি স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব অক্ষুণœ রাখতে চায় তাহলে অচিরেই ৭ই জানুয়ারী আন্তর্জাতিক ফেলানী দিবস পালনের জন্য রাষ্ট্রীয় পত্র পাঠাতে হবে। ফেলানীকে যেদিন হত্যা করা হয়েছিল সেই সময় পানি পানি করে আত্মচিৎকার করছিল ফেলানী। পাশে বাবা নুরুল ইসলাম অসহায়ের মত দেখছিল আর তার চোখের সামনেই মৃত্যুকে বরণ করেনিল ফেলানী। এ যেন কাঁটা তারে ঝুলছে বাংলাদেশ। আমরা ফেলানীর আত্মার শান্তি কামনা করছি। আল্লাহ যেন আর কোন ফেলানীকে এভাবে নৃশংস ভাবে হত্যার করার দৃশ্য না দেখায়।
৭ই জানুয়ারি ফেলানী দিবস আন্তর্জাতিকভাবে পালন করার আহ্বান বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতির।
বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা ও মহাসচিব মোঃ মফিজুর রহমান লিটন ও সাংগঠনিক সম্পাদক এড. সাইফুল ইসলাম সেকুল ৬ জানুয়ারি ২০২০, সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে ৭ই জানুয়ারি ২০২০ আন্তর্জাতিকভাবে ফেলানী দিবস পালন করার জন্য পালন করার জন্য দেশবাসীসহ বিশ্ব বাসির কাছে আহ্বান জানান। নেতৃবৃন্দ বলেন, চোখ বন্ধ করলে আজো মনে হয় কাঁটাতারে ঝুলছে রক্তাক্ত ফেলানীর লাশ। এতো বছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও আজও সঠিক বিচার পেলনা ফেলানীর পরিবার। আমরা আশা করবো ফেলানীর মানে ঢাকার যে কোন একটি সড়ক নামকরণ করে তার প্রতি আমাদের দেশের সকলে সম্মান প্রদর্শন করবেন।