আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের সময় যে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিখোঁজ হয়েছে তারা সবাই মারা গেছে এবং তাদের ডেথ সার্টিফিকেট দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে।
শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে জাতিসংঘের এক দূতের সঙ্গে বৈঠকে রাজাপাকসে ওই মন্তব্য করেন বলে বিবিসি জানিয়েছে।
শ্রীলঙ্কার আইন অনুযায়ী, ডেথ সার্টিফিকেট না থাকলে নিখোঁজ স্বজনের সম্পত্তি, ব্যাংক একাউন্ট বা অন্যান্য সম্পদ তার পরিবারের সদস্যরা দখলে নিতে পারেন না।
সোমবার জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক হানা সিঙ্গারের সঙ্গে বৈঠকের সময় ওই বক্তব্য রাখেন প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে। তিনি বলেন, নিখোঁজদের অধিকাংশই লিবারেশন অব তামিল ইলমের (এলটিটিই) নিয়োগকৃত লোক ছিল।
নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যরা তাদের প্রিয়জনরা খোঁজ পেতে নিয়মিত বিক্ষোভ করে আসছে। তাদের অনেকেরই আশা, তাদের হারানো স্বজনরা এখনো বেঁচে আছে এবং নিরাপত্তা বাহিনী তাদের আটকে রেখেছে। যদিও তাদের এ ধারণা বহু আগেই নাকচ করে দিয়েছিল সরকার।
নিখোঁজদের পরিবারের শত শত সদস্যরা প্রতিদিন তাদের জন্য প্রার্থনা করতে মিলিত হয়ে প্রতিবাদ জানানোর মাধ্যমে তাদের স্মৃতি অমলিন রেখেছে।
বিদ্রোহী তামিলরা পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে যুদ্ধে নেমেছিল। কিন্তু দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলী বৌদ্ধ সমর্থিত সরকার শেষ পর্যন্ত তাদের দমন করতে সক্ষম হয়। ২৬ বছর ধরে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ চলার পর ২০০৯ সালের মে মাসে বিদ্রোহী তামিল টাইগারদের পরাজিত করে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী। এই যুদ্ধে আনুমানিক এক লাখ নিহত ও প্রায় ২০ হাজার মানুষ নিখোঁজ হয়, যাদের অধিকাংশই তামিল।
যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে গোটাবেয়ে রাজাপাকসে শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন এবং বিদ্রোহীদের নির্মূলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। সিংহলীরা তাকে বীরের মর্যাদা দিলেও তাকে গভীরভাবে অবিশ্বাস করে দেশটির তামিল জনগোষ্ঠী।
যুদ্ধ শেষে উভয়পক্ষের বিরুদ্ধে নৃশংসতার অভিযোগ আনে জাতিসংঘ; বিশেষ করে যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে।
এমন অনেক ভাষ্য পাওয়া গেছে, যেখানে বলা হয়েছে তামিল বাহিনী যখন আত্মসমর্পণ করার চেষ্টা করছিল তখন তাদের হত্যা করা হয় অথবা পরে হেফাজতে নিয়ে হত্যা করা হয়। জোরালো ভিডিও প্রমাণ থাকার পরও শ্রীলঙ্কা সরকার ধারাবাহিকভাবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরের বছরগুলোতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মহিন্দা রাজাপাকসে ও তার ভাই গোটাবেয়ে রাজাপাকসের বিরোধী বলে চিহ্নিত ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও অধিকার আন্দোলনকারীদের জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যাওয়া চলতে থাকে। গ্রেফতার করা এসব লোকজনের খোঁজ আর কখনো পাওয়া যায়নি।
সূত্র: বিবিসি