আশুলিয়া প্রতিনিধি: ঢাকা-আরিচা ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক নবীনগর আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলের ব্যস্ততম সড়ক ও হাইওয়ে রোডসহ বিভিন্ন সড়কে তিন চাকা মাহিন্দ্রা, অটোরিক্সাসহ যানবাহন থেকে দালাল কর্তৃক ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। নামে বে-নামে একটি চক্র নিত্য নতুন কৌশলে মাসিক চাঁদা (কথিত মানতি) সিস্টেমে প্রতিদিন ও প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা নিচ্ছে দালালরা। অন্যদিকে ট্রাফিক আইন মানছে না বেশিরভাগ পথচারীরা, এতে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণঘাতীর মতো ঘটনা।
সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের জিরানী, ধামসোনা ইউনিয়নের শ্রীপুর, ভাদাইল মোড়, পুরাতন আশুলিয়া থেকে (নরসিংহপুর) ও নরসিংহপুর থেকে কাশিমপুরের রাস্তায় অবৈধ শত শত তিন চাকা মাহিন্দ্রা এবং অটোরিকসা থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তারা অনেকেই বলেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই গাড়ি চালানো হচ্ছে।
ঢাকা জেলার সাভার ও আশুলিয়ার বিশমাইল, নবীনগর, নয়ারহাট, বাইপাইল, (ভাদাইল মোড়) শ্রীপুর, জিরানী, অন্যদিকে জামগড়া, ছয়তালা, নরসিংহপুর, জিরাবো, পুরাতন আশুলিয়াসহ বিভিন্ন স্পট থেকে মানিক, দুলাল ও মেহেদীসহ ৭-৮ জন লাইনম্যান সাভার ট্রাফিক জোন এলাকায় নতুন কৌশলে চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এবিষয়ে বিভিন্ন সুত্র জানায়, এর আগে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে লাইনম্যান বদলে দেওয়া হয়, লাইনম্যান ও দালালের মাধ্যমে প্রতিটি মাহিন্দ্রা থেকে প্রতিদিন ১৫০ টাকা চাঁদা নেয়া হয়। মাহিন্দ্রা গাড়ি চালক মোঃ সাদ্দাম মিয়াসহ কয়েকজন গাড়ি চালক জানান, উক্ত ৭-৮ জন দালাল প্রতিটি মাহিন্দ্রার চালকের কাছ থেকে প্রতিদিন ১৫০ টাকা চাাঁদা নিচ্ছে, আর এসব কথা কাউকে না বলার জন্য চালকদেরকে ভয় দেখায় তার। চালকরা বলেন, নতুন নতুন কৌশলে পরিবহনে চলছে ব্যাপক চাঁদাবাজি, এ যেন দেখার কেউ নেই। সেই সাথে সরকার নতুন আইন করায় গাড়ি চালকরা বিপাকে পড়েছেন বলে অনেকেই জানান।
কিছুদিন আগে আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় চলাচলরত অটোরিকশা থেকে টোকেনের মাধ্যমে চাঁদা নেয়ার অভিযোগ উঠেছিল আশুলিয়া থানা যুবলীগের বিরুদ্ধে, কিন্তু চাঁদা আদায় সংক্রান্ত বিষয় জানতে চাইলে আশুলিয়া থানা যুবলীগের আহবায়ক কবির হোসেন সরকার বলেন, যুবলীগের নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজ নয়, আর যারা যুবলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদা আদায় করছে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক। এবিষয়ে কবির সরকার গণমাধ্যম কর্মীদেরকে বলেন, যুবলীগ বা আমার জনপ্রিয়তাকে নষ্ট করতে একটি মহল আমার রাজনৈতিক সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য বদনাম করার চেষ্টা করছে। এই চাঁদাবাজ চক্রটি দলীয় কোনো নেতা কর্মী নয়। কবির সরকার আরও বলেন, আমি গণমাধ্যমকর্মী ভাইদের আহব্বান জানাই যে, আপনারা অনুসন্ধান করে সঠিকভাবে সত্য প্রতিবেদন প্রকাশ করুন।
ঢাকা জেলা ট্রাফিক বিভাগের সাভার জোন এলাকার বিশমাইল, নবীনগর, নয়ারহাট, বাইপাইল, শ্রীপুর, ভাদাইল মোড়, জামগড়া, নরসিংহপুর, জিরাবো ও পুরাতন আশুলিয়াসহ বিভিন্ন স্পট থেকে প্রতিদিন ও মাসিক সিস্টেমে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হয় বলে বিভিন্ন যানবাহনের চালকেরা জানায়, অনেকেই বলেন, নতুন নতুন কৌশলে চাঁদা আদায় করছে কিছু অসাধু পুলিশের দালাল চক্রের লাইনম্যান। কিছু পুলিশ অফিসার ও রাজনৈতিক নেতার নাম ভাঙিয়ে এসব এলাকায় চাঁদাবাজি চলছে।
লাইসেন্সবিহীন অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি দেখা যায় ভিন্ন, রোডে যখন কোনো পুলিশ সদস্য যানবাহনের কাগজপত্র চায় তখন বেশিরভাগ গাড়ির চালক বলেন, মানতি আছে, আর যার কাছে মাসিক চাঁদা দেয়া হয়,ওই চালক-তাকে মোবাইল ফোন ধরিয়ে দিয়ে থাকে। যারা প্রকৃত সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান গাড়ির মালিকপক্ষ। এবিষয়ে আশুলিয়া থানার শ্রীপুরের স্থানীয় প্রভাবশালী বাবুল নামের এক ব্যক্তির ৩-৪ জন লাইনম্যান রেখে তাদের দিয়ে টাকা কালেকশন করায়, তা প্রতিদিন ৫-৭ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে বলে তারা জানান, এবিষয়ে বাবুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওরা মিথ্যা কথা বলছে, শ্রীপুরে ড্রাইভারদের কোনো সমস্যা হলে আমি দেখি। অন্যদিকে ভাদাইল মোড় থেকে প্রতি মাসে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার চাঁদাবাজি হয় বলে অনেকেই জানান।
উক্ত ব্যাপারে ঢাকা জেলা ট্রাফিক পুলিশের সাভার জোন (টিআই, প্রশাসন) মোঃ আবুল হোসেন এ প্রতিনিধিকে বলেন, নরসিংহপুর আমাদের পুলিশ ডিউটি করেন না, তিন চাকা অটোরিকশা, বা মাহিন্দ্রা এবং লাইসেন্সবিহীন কোনো যানবাহন চলবে না রোডে, আর চাঁদাবাজ সে যেই হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উক্ত বিষয়ে সাভার হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)সহ উপর মহলের পুলিশ কর্মকর্তাগণ বলেন, এসব তিন চাকা যানবাহনের মালিক ও চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাইওয়ে রোড দখল করে রেখেছে শ্রীপুর এলাকার প্রায় ২০০ মাহিন্দ্রা ও বিভিন্ন অবৈধ যানবাহন। জনমনের প্রশ্ন কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য ও নব্য আওয়ামীলীগ, নামধারী যুবলীগের নেতা কর্মীরা সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন করতে দালাল কর্তৃক চাঁদা আদায় করেছেন। তবে প্রশাসনের উচ্চ মহল এসকল বিষয়ের প্রতি কঠোরভাবে হস্তক্ষেপ করলে চাঁদাবাজি বন্ধসহ সকল সমস্যা সমাধানের আশার আলো দেখা যেতে পারে বলে মনে করেন সচেতন মহল।