হেলথ ডেস্ক: নির্ধারিত সময়ে ওষুধ খেতে ভুলে যাওয়ার অভ্যাস রয়েছে অনেকের। অথচ এমন অনেক ওষুধ রয়েছে যা চিকিৎসকের নির্ধারিত সময়ে না খেলে তা নিরাময়ের বিপরীতে ক্ষতি ডেকে আনে।
তবে এমন বেখেয়ালিদের জন্য ত্রাতা হয়ে এসেছে ‘প্লেক্সাসডি’। যা রোগীকে ঠিক সময়ে মনে করিয়ে দেবে সেই ওষুধের কথা।
বলতে গেলে, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে ওষুধ খাওয়া ভুলে যাওয়ার অভ্যাসটা রোগীর জন্য কঠিন হয়ে যাবে।
‘প্লেক্সাসডি’ একটি ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার অ্যাপ। এই অ্যাপ শুধু রোগীকে ওষুধ খাওয়ার সময়ই মনে করে দেবে না, এর সঙ্গে দেবে আরো কয়েকটি চমকপ্রদ সেবা।
সেবাগুলো হচ্ছে - স্মার্ট এপয়েন্টমেন্ট, ই-প্রেস্ক্রিপশন, ডিজিটাল রশিদের ব্যবস্থা, অনলাইন রিপোর্ট, ফলো-আপ মনে করিয়ে দেয়া, ক্লাউড সংগ্রহ ব্যবস্থা।
প্লেক্সাসডি এর অ্যাপ কিংবা ওয়েবসাইট আপনাকে আরো চমকপ্রদ কয়েকটি সেবা দিয়ে থাকে। যেমন,
হতাশাজনক অভিজ্ঞতা থেকে অ্যাপটি তৈরির আইডিয়াটি মাথায় আসে বলে জানিয়েছেন প্লেক্সাসডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজিম মাহমুদ।
স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি বলেন,আমি পরিবারের বড় ছেলে। বাবা বিদেশে অবস্থান করার কারণে পরিবারের সবার স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হতো। ২০১৫ সালে স্বাস্থ্য অবস্থার পর্যাপ্ত সঠিক তথ্যের অভাবে মায়ের কিডনি ড্যামেজ হয়ে যায়। তখন থেকেই ভাবতে থাকি কীভাবে স্বাস্থ্যসেবার এই সমস্যা দূর করা যেতে পারে।
নাজিম মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশে রোগীর সংখ্যা অনুপাতে চিকিৎসকের সংখ্যা অতি নগণ্য। যা একজন চিকিৎসকের বিপরীতে সেবাপ্রার্থী ১ হাজার ৮৪৭ জন। এদেশে অধিক রোগীর চাপে চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক চিকিৎসকই গাফলতি করে ফেলেন। বা তাদের শরীর-মস্তিষ্ক এতো ভার নিতে পারে না। এই সমস্যাগুলো বিবেচনা করেই ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার একটি উদ্যোগ হিসেবে প্লেক্সাসডি এর যাত্রা শুরু হয়।
তিনি যোগ করে, এক কথায় বলতে গেলে প্লেক্সাসডি এমন একটি অনলাইন প্লাটফর্ম যেখানে একজন চিকিৎসা সেবা প্রার্থী সব ধরনের স্বাস্থ্য সেবা পেতে পারেন।
কিভাবে কাজ করে প্লেক্সাসডি?
প্লেক্সাসডিতে একজন রোগী তার সমস্ত মেডিকেল তথ্য এর ক্লাউডে আপলোড করতে পারেন এবং পরবর্তীতে যখন রোগী আবারো স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসলে এই ডাটাগুলো চিকিৎসককে এক ঝলকে দেখাতে পারবেন। চিকিৎসকের কাছে রোগীর মেডিকেল সিস্টোরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই অ্যাপটির মাধ্যমে একজন সেবাপ্রার্থী যে কোনো ধরনের কাজ করে নিতে পারে। অনলাইন এপয়েন্টমেন্ট থেকে শুরু করে পেমেন্ট, রোগীর মেডিকেল ইতিহাসের ডাটা আপ্লোড, প্রেসক্রিপশন নেওয়া ইত্যাদি কাজ অনায়াসে করতে পারবেন যে কেউ।
শুরুতে একজন সেবাপ্রার্থী প্লেক্সাসডি এর অ্যাপ কিংবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সহজেই তার পছন্দের চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করবেন। এরপর সেবাপ্রার্থী চিকিৎসকের চেম্বারে গেলে সেখানে একজন প্রতিনিধি রোগীর সব মেডিকেল ডাটা সফটওয়্যারে প্রদান করবে এবং তা সঙ্গে সঙ্গে ক্লাউডে আপলোড হয়ে যাবে। এরপর সেবাপ্রার্থীর হাতে একটি প্রচারমূলক পত্র দেয়া হবে যেখানে প্লেক্সাসডি এর মৌলিক সেবাগুলো বর্ণনা করা থাকবে। এগুলো হলো-
স্মার্ট এপয়েন্টমেন্ট: প্লেক্সাসডির স্মার্ট এপয়েন্টমেন্ট ব্যবস্থাতে সফটওয়্যারের অ্যালগরিদমের সাহায্যে চিকিৎসকের সাক্ষাৎকারের কাছাকাছি সময় নির্ধারণ করতে পারে। অর্থাৎ চিকিৎসকের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা বসে অপেক্ষা করা লাগবে না।
ই-প্রেস্ক্রিপশন: প্লেক্সাসডি প্রেসক্রিপশন তৈরিতে নিয়ে এসেছে পরিবর্তন যা আগের থেকে আরো নির্ভুল এবং প্রস্তুত করতে আগের থেকে কম সময় নেয়। এর সফটওয়্যার একজন চিকিৎসক গত এক বছর ধরে যে সকল ওষুধ তার রোগীদের দিয়ে থাকেন এর মধ্যে থেকে সুপারিশ করবে। সফটওয়্যারটি রোগীর পূর্বের মেডিকেল ইতিহাস বিবেচনা করে ক্রস-চেক করবে এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত দেবে যে তার জন্যে যে ওষুধ প্রেসক্রিপশনে দেয়া হয়েছে তা ঠিকঠাক আছে কি না। এক্ষেত্রে ভুল ওষুধ প্রদান যাতে না হয় সেটি সমাধান করার জন্য একটি প্রচেষ্টা চালাচ্ছে প্লেক্সাসডি।
ডিজিটাল রশিদের ব্যবস্থা: প্লেক্সাসডি সেবাপ্রার্থীদের খরচের হিসাবের সুবিধার জন্য ডিজিটাল বিলের ব্যবস্থা করেছে যেখানে মাসিক, দ্বিমাসিক, ত্রৈমাসিক এবং বাৎসরিক হিসাব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে রাখা যাবে।
অনলাইন রিপোর্ট: ওয়েবসাইট কিংবা অ্যাপের মাধ্যমে রোগীর কাছে রিপোর্ট পৌঁছে যাবে। তাই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর আবার একজন রোগীকে পুনরায় সেখানে গিয়ে রিপোর্ট আনার ধকল সইতে হবে না।
ওষুধ খাওয়ার সময় মনে করে দেয়া: প্রেসক্রিপশনে যে সকল ওষুধ দেয়া হয় তা নির্ধারিত সময়ে গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে এই ব্যবস্থা। যারা ওষুধ খাওয়ার সময় ভুলে যান, তাদের জন্য বেশ কার্যকরি অ্যাপের এই সেগমেন্টটি।
ক্লাউড সংগ্রহ ব্যবস্থা: প্লেক্সাসডির ক্লাউডে একজন রোগীর সব ধরনের তথ্য সংরক্ষিত থাকে। যে কোনো সময় যে কোনো স্থান থেকে সে তথ্য আপনি সংগ্রহ করতে পারেন।
ফলো-আপ মনে করিয়ে দেয়া: শুধ ওষুধই নয় নির্ধারিত সময়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া বিষয়টিও মনে করিয়ে দেবে প্লেক্সাসডি অ্যাপ বা এর ওয়েবসাইট।
গত বছরের ১৫ এপ্রিলে প্লেক্সাসডি অ্যাপ অফিসিয়ালভাবে চালু করা হয়। ছয় মাসের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে এখন পর্যন্ত ২৫ টি চেম্বার, ২০০ জন চিকিৎসক এবং ৫৬০০ চিকিৎসা সেবা প্রার্থী নিয়ে কাজ করছে। প্রতিদিন প্রায় ১০০-১২০ টি এপয়েন্টমেন্ট এবং প্রতি মাসে ১৫০০০-১৬০০০ ব্যবহারকারী প্লেক্সাসডি থেকে সেবা গ্রহণ করে থাকে।