সাইদুর রহমান রিমন : সরকারের সঙ্গে আলাপ আলোচনা ও পরামর্শ ছাড়াই গার্মেন্টস কারখানার কতিপয় মালিক লাখ লাখ শ্রমিককে ঢাকায় জড়ো করার ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে এমন ক্ষোভ প্রকাশ করে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।....এটুকু খবর শুনেই বেশ খুশী হয়েছিলাম, ভেবেছিলাম-গার্মেন্ট কারখানার কতিপয় রাষ্ট্রদ্রোহী মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু পরক্ষণেই বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ‘র যৌথ বিবৃতি দেখে রীতিমত হতাশ হয়ে গেলাম।=====‘যে সকল প্রতিষ্ঠান পিপিই, মাস্ক ইত্যাদি তৈরী করছে সে সকল প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনে খোলা রাখতে পারবে’- এখনো এমন ঘোষণা দিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি ড: রুবানা হক এবং বিকেএমইএ সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান এমপি।
মাত্র দু’দিন আগে সরকারের কোনো পরামর্শ করা ছাড়াই আপনাদের কারখানাসমূহের মালিকরা ঢাকায় লাখ লাখ শ্রমিকের মহাসমাবেশ ঘটিয়ে দেশের যে সর্বনাশ ঘটিয়েছেন, রাষ্ট্রের জন্য যে মহা বিপর্যয়ের সূচণা ঘটিয়েছেন ; এদেশে প্রকাশ্যে নাক উচিয়ে ভুরু নাচিয়ে কথা বলার অধিকার সে মুহূর্তেই আপনারা হারিয়ে ফেলেছেন। সারাদেশের এ শ্রমিকরা ঢাকায় জড়ো হওয়ার দিন পর্যন্ত দেশের করোনা বিস্তারের চিত্র দেখুন আর পরদিন থেকেই বিদ্যমান চলমান পরিস্থিতি মিলিয়ে দেখুন-তাহলেই বিপর্যয় সূত্রপাত কী তা বুঝতে কষ্ট হবে না। আপনারা অজ্ঞাত স্পর্ধায় এখনো বলে চলছেন, ‘রপ্তানীমূখী শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহের যাদের জরুরী রপ্তানী কার্যাদেশ রয়েছে এবং যে সকল প্রতিষ্ঠান পিপিই, মাস্ক ইত্যাদি তৈরী করছে সে সকল প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনে খোলা রাখতে পারবে।’
এর আগে আপনাদের বলতে হবে এ মুহূর্তে পৃথিবীর কোন্ দেশের কোন্ বায়ার আপনাদের তৈরি পোশাক গ্রহণের জন্য বসে আছে? জানাতে হবে দুনিয়ার কোন্ দেশে একটি ক্ষুদ্র কারখানাও সচল রাখার নজির রয়েছে? যদি তা জানাতে পারেন তাহলে ধরেই নেবো বিভিন্ন কারখানায় খামোখা শত শত শ্রমিক জড়ো রেখে কেবলই আপনারা লাশের মিছিল দেখার চক্রান্তে মেতে উঠেছেন। আমরা ধরেই নিবো-সাফল্যমন্ডিত বাংলাদেশে আরেকটি ৭৪‘ পরিস্থিতি সৃষ্টির নীলনকশা এঁকেছেন আপনারা।
প্রিয়ভাজনরা কয়েকটা সেকেন্ড একটু ভেবে দেখুন----দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক রুটের সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো ১০ দিন আগেই সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এক কেজি আলু-সিমও এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠানোর কোনো পথ খোলা নেই। অথচ তা সত্তেও ‘জরুরি রপ্তানী কার্যাদেশ থাকা কারখানাগুলো খোলা রাখা‘ সংক্রান্ত অনুমোদন তারা কেন দিচ্ছেন? বাণিজ্য ছাড়াও আর কী স্বার্থ লুকিয়ে আছে সেখানে??
রপ্তানী আদেশ রক্ষায় ব্যর্থ হলে কয়েকজন কারখানা মালিকের বাণিজ্য হবে না, কয়েক কোটি টাকা লসও হতে পারে। তাতে কী? এই ক্ষতি রোধে গোটা দেশবাসীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে কী একটুও বিবেকে বাধছে না? ছি: ছি: ছি:
লেখক, চীপ রিপোর্টার-ইন ক্রাইম,বাংলাদেশ প্রতিদিন
(লেখাটি তার ফেসবুক থেকে নেয়া)