সাইদুর রহমান রিমন : পুলিশের মানবিকতার একগুচ্ছ প্রতিবেদন নিয়ে প্রকাশিত রকমারী পাতাটি ছিল আজ আলোচনার শীর্ষে। গত রাতে অনলাইনে আপলোড হওয়ার পর থেকেই প্রশাসন, পুলিশ, সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে সর্বস্তরের পাঠক সমাজে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে প্রতিবেদনটি। দুপুরের মধ্যেই তা যেন টক অব দি সিটি ছাড়িয়ে টক অব দি কান্ট্রিতে পরিনত হয়।
বরাবরই ঘুষ-দুর্নীতি, অপরাধ-অপকর্ম, বখড়াবাজি, জুলুমবাজির হাজারো অভিযোগে অভিযুক্ত পুলিশ বাহিনী হঠাত করেই করোনা কবলিত জাতীয় দুর্যোগে আমূল বদলে গেছে। সর্বত্রই দায়-দায়িত্ববোধ সম্পন্ন মানবিকতায় পুলিশ দ্রুতই জনসাধারণের কাছাকাছি পৌঁছেছে, জয় করেছে অগণিত মানুষের হৃদয়। যুগ যুগ ধরে এমন পুলিশই কাম্য ছিল দেশবাসীর। দুষ্টের দমন, শিষ্টের লালন, সর্বত্র ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা সর্বোপরি পুলিশকে অসহায় মানুষের ভরসাস্থল বানাতে সব সরকারই নানারকম কর্মসূচি নিয়েছে, খরচ করেছে হাজার হাজার কোটি টাকা। কিন্তু সরকারগুলো ক্ষমতায় টিকে থাকতে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের উপর জুলুম-নির্যাতন চালাতে এই পুলিশ বাহিনীকেই পেটোয়া বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করেছে। ক্ষমতাসীনরা দলবাজ লাঠিয়াল বানাতে গিয়েই সব শুভ উদ্যোগ ভুলুন্ঠিত করেছে। ফলে পুলিশকে আর মানবিক করে তোলা যায়নি, পুলিশও আগে হয়ে উঠেনি জনতার। বরং জনবিরোধী নানা কর্মকান্ডে পুলিশ ও জনসাধারণের মধ্যে পরস্পরবিরোধী অনাস্থা, অবিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে উঠে।
সেই পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা করোনা কবলিত জাতীয় দুর্যোগে কল্পনাতীত ভাবে পাল্টে যেতে থাকে, নানারকম মানবিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে তারা ক্রমেই জনসাধারণের ভরসাস্থলে পরিনত হতে চলেছে। দায়িত্ব জ্ঞ্যানে, মানবিক পুলিশে বদলে যাওয়ার সেসব কাহিনী তুলে এনেছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টার সাঈদুর রহমান রিমন। তার ছোট-বড় বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন নিয়েই প্রকাশিত হয়েছে 'পুলিশ যখন মানুষের কাছে' শীর্ষক রকমারীর বিশেষ পাতা।
পুলিশকে নিয়ে প্রকাশিত ইতিবাচক প্রতিবেদনগুলো পুলিশ সদস্যদেরও বেশ আলোড়িত করেছে। রাজধানীর থানা, ক্যাম্প, ফাঁড়িসহ পুলিশের ডিউটিস্থল সমূহেও আলাপ আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠে প্রতিবেদনটি। সর্বাধিক প্রচারিত পত্রিকায় পুলিশের প্রশংসামূলক এ প্রতিবেদনকে পুলিশের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাগণও 'তাদের ভাল কাজের স্বীকৃতি' বলে মনে করছেন। মাঠ পর্যায়ের একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, ইতিবাচক এসব খবর পুলিশকে আরো আরো ভাল কাজের প্রেরণা যোগাবে।
সাধারণ পাঠকরাও অভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেছেন, বছরের পর বছর ধরে মিডিয়ায় সংবাদ মানেই পুলিশের বিপক্ষে অভিযোগ উত্থাপন করাই যেন বিশেষ বৈশিষ্ঠ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বাহিনীর সবাই খারাপ না, অনেকেই অনেক ভাল কিছু করছেন-মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। সেসব দৃষ্টান্ত তুলে ধরার প্রতিবেদনটি অন্যদের অনুকরণে উৎসাহ সৃষ্টি করবে। পুলিশের ইতিবাচক নানা দিক নিয়ে করা একগুচ্ছ প্রতিবেদনের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। এ সংক্রান্ত বিভিন্ন স্ট্যাটাসে শত শত নেটিজেনকে গঠনমূলক নানা মন্তব্য করতে দেখা গেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক আলোচিত পুলিশ বিষয়ক প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী সাংবাদিক সাঈদুর রহমান রিমন তার প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, ভাল কাজের প্রশংসা আর খারাপ কর্মকান্ডের প্রতিবাদ ও ঘৃণা প্রকাশ করার মতো সৎ সাহসটুকু থাকা উচিত। এতে কার স্বার্থ ক্ষুন্ন হলো, কে বিরাগভাজন হলেন- একজন সংবাদকর্মির কাছে তা খুব একটা পাত্তা পায় না। তিনি বলেন, 'একটু খোঁজ নিলেই দেখবেন, আমার মোট নিউজের প্রায় আশি ভাগই হচ্ছে অপরাধ সংক্রান্ত অনুসন্ধানের। আর এসব নিউজের প্রায় ৯০ ভাগ জুড়েই পুলিশ বিরোধী নানা অভিযোগ উঠে এসেছে। কিন্তু এই পুলিশই যখন দৃষ্টান্ত সৃষ্টির নানা কাজ করছে, নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে মানুসৈর বিপদ আপদে ছুটে যাচ্ছে-সেসব কথা তুলে না ধরলে নিজের বিবেকের কাছেই যে অপরাধী হয়ে থাকতে হবে।'