আমার দেশের সংবাদ ডেস্ক : আজ (৭ মে) একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী'র প্রথম প্রয়াণ দিবস।
আধুনিক বাংলা গানের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে গান গেয়েছেন বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রে। একের পর এক সুরের মায়া ছড়িয়েছেন সঙ্গীত জগতে।
সুবীর নন্দী মূলত চলচ্চিত্রের গানে কন্ঠ দিয়েই খ্যাতি অর্জন করেন। আধুনিক সঙ্গীতের পাশাপাশি গেয়েছেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, ভজন, কীর্তন এবং পল্লীগীতিও। এত গানের মাঝেও নজরুল সঙ্গীতের প্রতি অন্যরকম ভালোলাগা থাকার কারণে নজরুল সঙ্গীতের অ্যালবামও প্রকাশ করেছেন তিনি।
সুবীর নন্দী ১৯৫৩ সালের ১৯ নভেম্বর সিলেটের হবিগঞ্জ মহকুমার তেলিয়াপাড়া চা বাগানে জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পর যেটি হল হবিগঞ্জ জেলা। তাঁর বাবা সুধাংশু নন্দী তখনকার একজন মেডিকেল অফিসার ছিলেন। বাবার চাকরিসূত্রে সুবীর নন্দীর শৈশবকাল চা বাগানেই কেটেছে। সেখানের একটি স্কুলেই তাঁর প্রথম হাতেখড়ি। তবে পড়াশোনার অধিকাংশ সময়ই কেটেছে হবিগঞ্জ শহরে।
সুবীর নন্দীর মা পুতুল রানী গান করতেন। কিন্তু পেশাদারি সঙ্গীতে আসেননি কখনও। সাত-আট বছর বয়সে তাঁর সঙ্গীতে হাতেখড়ি মায়ের কাছেই। পরবর্তীতে বড় ভাই তপন কুমার নন্দীর কাছ থেকেও তালিম নিয়েছেন। তাছাড়া ভাইবোনের সঙ্গে দীর্ঘদিন প্রয়াত ওস্তাদ বাবর আলী খান সাহেবের কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নিয়েছেন। মূলত ওস্তাদ বাবর আলী খানের কাছেই তাঁর সঙ্গীতের হাতেখড়ি হয়।
সুবীর নন্দীর জীবনের প্রথম গান রেকর্ড হয় ১৯৬৭ সালে রেডিওতে। পেশাগতভাবে সুবীর নন্দী গানের জগতে আসেন ১৯৭০ সালে ঢাকা রেডিওতে প্রথম রেকর্ডিং এর মধ্য দিয়ে। প্রথম গান 'যদি কেউ ধূপ জ্বেলে দেয়' -এর গীত রচনা করেন মোহাম্মদ মুজাক্কের এবং সুরারোপ করেন ওস্তাদ মীর কাসেম। প্রথম প্লে-ব্যাক রাজা হোসেন খান ও সুজেয় শ্যামের (রাজা শ্যাম) সঙ্গীত পরিচালনায় আবদুস সামাদ পরিচালিত ‘সূর্য গ্রহণ’ ছবিতে ১৯৭৪ সালে। এর আগে ১৯৭২ সালে প্রথম ঢাকা রেডিওতে লাইভ অনুষ্ঠানে গান করেছিলেন।
৫০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে গেয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি গান। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রে গেয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। ১৯৮১ সালে তাঁর একক অ্যালবাম "সুবীর নন্দীর গান" ডিসকো রেকর্ডিংয়ের ব্যানারে বাজারে আসে। তিনি গানের পাশাপাশি দীর্ঘদিন জনতা ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন।
চলচ্চিত্রের সঙ্গীতে তাঁর অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করেন। তিনি ১৯৮৪ সালে মহানায়ক, ১৯৮৬ সালে শুভদা, ১৯৯৯ সালে শ্রাবণ মেঘের দিন, ২০০৪ সালে মেঘের পরে মেঘ এবং ২০১৫ সালে মহুয়া সুন্দরী চলচ্চিত্রের গানে কন্ঠ দিয়ে পাঁচবার এই পুরস্কার লাভ করেন।
সঙ্গীতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।
২০১৯ সালের ৭ মে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন সুবীর নন্দী মারা যান।
তার বহু গান এখনো মানুষের মুখে মুখে ফিরে।