সাইদুর রহমান রিমন : পল্লবী থানার ভেতরে বিস্ফোরিত বোমার আওয়াজ আরো বড় আকারে ছড়িয়ে 'ভয়ঙ্কর ঘটনা' ধামাচাপা দেয়ার উদ্যোগটা প্রায়ই সফল হতে যাচ্ছিল। কিন্তু মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারের গোয়েন্দা বুদ্ধিমত্তায় দুর্ধর্ষ খুনিদের সব পরিকল্পনা ভুণ্ডুল হয়ে গেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই বেরিয়ে এসেছে "ভয়ঙ্কর খুনের মিশনের" গা শিউরে ওঠা কাহিনী।
বেশ কয়েকটি পেশাদার কিলার গ্রুপ যৌথভাবে অংশ নিচ্ছিল 'মার্ডার উইদাউট মিস' মিশনের। এক মার্ডারেই মিরপুরের চলমান রাজনীতি, বস্তি ও মাদক বাণিজ্য, জবর দখলদারিত্বের সাম্রাজ্য, নিষিদ্ধ অটো গাড়ির চাঁদাবাজি বহাল রাখার মতো সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সুতরাং মূল পরিকল্পনাকারী বিষয়টি মোটেও তুচ্ছ তাচ্ছিল্যতায় উড়িয়ে দেননি, বরং ফাঁকফোকর সব বন্ধ করে আটঘাট বেধেই মাঠে নামেন।
=====
যুবলীগের রাজনীতিতে তরতর করে উঠে আসা ডাকসাইটে এক নেতা যিনি জনপ্রতিনিধিত্বেও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন-সম্ভবত এমন কাউকে হত্যা করাই ছিল দুর্বৃত্তদের টার্গেট।
=====
টার্গেট সফলতায় আপাত দৃষ্টিতে উপকারভোগী কয়েকটি সিন্ডিকেট মিলেমিশে সংঘবদ্ধ চক্রে পরিনত হয়। তারাই এ খুনের মিশন সাকসেস করতে মোটা অঙ্কের টাকা জোগান দিতেও দ্বিধা করেনি। পাবনা সিরাজগঞ্জ থেকেও খুঁজে এনেছে ভয়ঙ্কর কিলারদের। যোগ দিয়েছে বৃহত্তর মিরপুরের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক সাহাদাত ও কিলার আব্বাসের গ্রুপ। টার্গেটকৃত যুবনেতার খুব কাছের ক'জন ক্যাডারকেও কিলিং মিশনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাদেরই একজন হচ্ছে শহিদুল।
অবশ্য শহিদুলকে নিয়ে আরেকটি রহস্যের সূত্রপাত ঘটেছে। মূলত দুই দিন আগেই শহিদুলকে কে বা কারা তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়-এ ব্যাপারে তার পরিবারের পক্ষ থেকে পল্লী থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত একটি জিডিও করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, কথিত নিখোঁজ শহিদুলকেই পুলিশ সোর্স হিসেবে ব্যবহার করে হত্যা মিশনের নেপথ্য কাহিনী আবিস্কার করে। পুলিশ জানতে পারে, খুনিরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে টার্গেটকৃত ব্যক্তির কাছাকাছি অবস্থান নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা নিয়েছে।
নিখোঁজ সংক্রান্ত জিডি পর্যবেক্ষণ করে ধারণা করা যায়, শহিদুলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই মঙ্গলবার রাতে পল্লবী থানার পুলিশ কালশী মোড়ের অদূরে অভিযান চালিয়ে খুনিদের একটি গ্রুপকে বোমাসহ আটক করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে সে বোমাগুলো থানায় নিস্ক্রীয় করতে গিয়ে পুলিশের অদক্ষতাতেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
===
ডিএমপির সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিক এক প্রেসব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, দুর্ধর্ষ এই অপরাধীদের ধরতে পল্লবী থানা পুলিশ ও মিরপুরের ডিসির নেতৃত্বে একটা টিম কাজ করছিল কয়েক দিন ধরে। যারা মিরপুরভিত্তিক অপরাধ করে থাকে, গ্রেফতার ব্যক্তিরা তাদেরই সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা গুরুতর একটি অপরাধ করার জন্য এসেছিল, সে অপরাধ হতে পারে কাউকে খুন করা, কোনো সম্পত্তি সংক্রান্ত অথবা ডাকাতি করা। আমরা বিষয়টা তদন্ত করে দেখছি।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে কালশী কবরস্থান এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ সমবেত হয়ে অপরাধের পরিকল্পনা করছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। সেখানে আরও কয়েকজন ছিল, যারা পালিয়ে যায়। গ্রেফতার ব্যক্তিদের কাছ থেকে দুটি আগ্নেযাস্ত্র, গুলি ও একটি ডিভাইস উদ্ধার করা হয়, যা ডিজিটাল ওয়েট মেশিনের মতো।’
এটি কোনো জঙ্গি-সংশ্লিষ্ট হামলার পরিকল্পনার অংশ কি না- জানতে চাইলে কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, যাদের আমরা গ্রেফতার করেছি তারা কোনো জঙ্গি গ্রুপের সদস্য নয়। তারা কোনো না কোনো ক্রিমিনাল গ্রুপের সদস্য। তাদের সঙ্গে ওয়েট মেশিনসদৃশ বস্তু যা ছিল, সেটির ভিতরই চারটি বিস্ফোরক ছিল। এর মধ্যে একটি বিস্ফোরিত হয়েছে। বাকিগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।’
ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) ওয়ালিদ হোসেন বলেন, গ্রেফতার তিনজন ‘ভাড়াটে খুনি’ বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। পুলিশের কাছে তথ্য ছিল, তারা পল্লবীর স্থানীয় একজন রাজনৈতিক নেতাকে হত্যা করবে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের পর স্পষ্ট হবে।