খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : ভাত বেড়ে না দেয়া, শিশুপুত্রকে মারধর ও সহবাসে অসম্মতির কারণে স্ত্রীকে ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে ও জবাই করে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে স্বামী ওমর ফারুক (২৫)। মঙ্গলবার (২৮ জুন) দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঘটনাটি ঘটেছে খাগড়াছড়ির রামগড়ের মধ্যম বলিপাড়া গ্রামে। রামগড় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈয়দ মো. ফরহাদ জানাান, ঘাতক স্বামী ওমর ফারুক পুলিশের কাছে হত্যার কথা স্বীকার করেছে । তিনি বলেন, আসামীর সম্মতিতে আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
পুলিশের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে ওমর ফারুক জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে স্ত্রী রাশেদা বেগম (২১) বাথরুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে পিছন দিক থেকে ধারালো দা দিয়ে তিনি তার ঘাড়ে সজোরে কোপ দেন। এতে স্ত্রী মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পর ঐ দা দিয়ে তাকে জবাই করে হত্যা করেন। পরে দা’টি ধুয়ে ছাগলের ঘরে লুকিয়ে রাখেন। তিনি বলেন, স্ত্রী রাশেদা প্রায়শই কারণে-অকারণে তার সাথে ঝগড়া করতো। তাকে ভাত বেড়ে দিত না। একমাত্র শিশু পুত্রকে মারধর করতো এবং দীর্ঘদিন ধরে সহবাসে অসম্মতি জানাচ্ছিল। এসব কারণেই তিনি রাশেদাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন।
রামগড়ের উত্তর লামকুপাড়ার বাসিন্দা নিহত রাশেদার বাবা আবু সৈয়দ বলেন, প্রায় তিন বছর আগে মধ্যম বলিপাড়ার প্রবাসি দেলোয়ার হোসেনের ছেলে ওমর ফারুকের সাথে রাশেদার বিয়ে হয়। ফারুক স্থানীয় সেনাইপুল বাজারের ফল ব্যবসায়ি। তাদের ২০ মাসের একটি পুত্র শিশু রয়েছে। গত ৬-৭ মাস থেকে সাংসারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ চলছিল। স্ত্রীকে মারধর করায় কয়েকমাস আগে স্থানীয় ইউপি মেম্বারের উপস্থিতিতে শালিসও হয়। মঙ্গলবার রাতেও স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে ফারুকের ছোট ভাই করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর রাশেদা স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে ২৮ দিনের মত তাদের বাড়িতে ছিল। ১০-১২ দিন আগে রাশেদা স্বামী সন্তানসহ শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যায়। অটোরিকশা চালক আবু সৈয়দ তার মেয়ে নৃশংংসভাবে হত্যার জন্য ঘাতক স্বামী ওমর ফারুকের ফাঁসির দাবি জানান।
রামগড় থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোহাম্মদ সামছুজ্জামান বলেন, খবর পাওয়ার সাথে সাথেই ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করেন। হত্যাকান্ডের ধরন থেকে প্রথমেই পারিবারিক কলহে খুন হওয়ার সন্দেহ মাথায় রেখে স্বামী ওমর ফরুক , শাশুড়ি জোহরা বেগম রাণী, দেবর শরিফ, ননদ আমেনা ও জান্নাতকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের হেফাজতে আনা হয়। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে হত্যর কাজে ব্যবহৃত দা, রক্তমাখা স্বামীর রক্তমাখা লুঙ্গি ইত্যাদি আলামত জব্দ করা হয়। ওসি আরও বলেন, কৌশল হিসেবে ওমর ফারুককে পুলিশের প্রহরায় হাসপাতালে রাখা হয়। পরে মঙ্গলবার দুপুরে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদে সে অপকটে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতেও সে সম্মতি জানিয়েছে। তাই তাকে খাগড়াছড়ি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেয়ার প্রস্তুতি চলছে। তিনি বলেন, নিহত রাশেদা বেগমের পিতা আবু সৈয়দ বাদি হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।