কে এম হামিদ রঞ্জু : ১৯৬৩ সালে আইয়ুব খানের উদ্ভট মৌলিক গনতন্ত্রের নির্বাচনে ধামরাইয়ের আজগর হোসেন আমদানি হলো বটে কিন্তু সাভারে তার কোন রাজনৈতিক সংগঠন এমনকি কোন অফিসও ছিল না। তদ্রূপ ভাবে আওয়ামী লীগ সহ কোন রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক কমিটি বা নেতা ছিল না।১৯৬৪ র দাঙ্গায় আশরাফ উদ্দিন খান ইমু আমি,এহসান উদ্দিন খান হিরু মিয়া,জমির উদ্দিন, সম্ভু সাহা( সম্ভু মানব) নৃপেন সাহা ঠাকুর বাড়ির বীরেন্দ্র আচার্য এরা মিলে দাঙ্গা বিরোধী নিরাপত্তা সংগঠন গড়ে তুলি।এরপর ১৯৬৬ ছয় দফা পেশের সময়েও সাভারে কোন আওয়ামী লীগের বা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মী চোখে পড়েনি।১৯৬৭ থেকে ৬৮ সালে ইমু ও আমি ছাড়া ছাত্র লীগের অন্য কোন নেতা ছিল না।মাঝে মধ্যে শের-এ-বাংল কৃষি কলেজে অধ্যায়নরত রফিকুল ইসলাম মোল্লা ঠান্ডু সাভারে এসে ছাত্র ইউনিয়নের সংগঠন দাড় করাতে চাইলেও তা ব্যর্থ হন।এখানে ইউছুফ আহমদ ছিল রাজনৈতিক গোল আলু অর্থাৎ তিনি সকালে আমাদের সাথে আবার বিকেলে রফিকুল ইসলাম ঠান্ডুর সাথে। ১৯৬৮ সালে আমি একটি দুর্ধর্ষ কাজে হাত দেই,তখন পাকিস্তান সরকারের নিষেধাজ্ঞা ছিল শহীদ মিনার নির্মাণের উপর; আমি সিদ্ধান্ত নিলাম সাভারে শহীদ মিনার আমি নির্মান করবো। ইমু সহ দুই চার জনের সাথে শলাপরামর্শ করে হাত দিলাম
নির্মান কাজে।আমি যদি বলি শহীদ মিনার নির্মাণ করার পরই সাভারের রাজনীতির পরিবেশ বিরাট একটি মোড় নেয়, তাহলে বোধহয় বাড়িয়ে বলা হবে না।দে: মো: ইদ্রিস সাহেবের সহযোগিতায় সাভারে ছাত্র লীগের পর প্রথম রফিকুল ইসলাম মোল্লা ঠান্ডু প্রথম ছাত্র ইউনিয়নের শাখা খুলেন তার সহোদর আবু বক্কর সিদ্দিক মিন্টু মোল্লা সহ হাতে গুনা কয়েক জনকে নিয়ে।
১৯৬৮/৬৯/৭০ এ তাদের তেমন ভুমিকা ছিল না।আমরা ছাত্র লীগই নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছি।আওয়ামী লীগের কোন কমিটি বা নেতাকে তখনও দেখিনি।তবে ঘুঘুদিয়ার সিরাজ ভাই মাঝে মধ্যে এসে আমাদের পরামর্শ দিয়ে যেতেন।
পর্ব -৯
১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সাভারে কোন রাজনৈতিক দলেরই সাংগঠনিক কমিটি ছিল না, অনেক নব্য আওয়ামী লীগের নেতা বলে বেড়ান আমার পিতা সাভার আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা তাহা সঠিক নয়।ঐ সময় সাভারে একমাত্র আওয়ামী লীগের হিতাকাঙ্ক্ষী
ছিলেন গেন্ডার কবির উদ্দিন খান(তারা মিয়া) আশরাফ উদ্দিন খান ইমুর পিতা।১৯৬৮/৬৯ সালে আমরা সাভারে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে প্রবল গণআন্দোলন গড়ে তুলি।১৯৬৯ সালে ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আদেশ দেয় সম্মিলিত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ করার জন্য ; সেই সময় রফিকুল ইসলাম মোল্লা ঠান্ডু ভাইকে আমরা ও তার অনুসারী কয়েকজনকে আমাদের সাথে নেই।উভয়
পাকিস্তানের প্রবল ছাত্র- গণআন্দোলনে আইয়ুব খানের পতন হলেও আরেক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। এই সামরিক জান্তাই পাকিস্তানে প্রথম সাধারণ মানুষের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন দেয় ১৯৭০সালে।১৯৭০ নির্বাচনে আমরা সাভার বাসি বিশেষ করে আমরা যারা ছত্র আন্দোলনে ছিলাম তারা বিস্মিত হলাম। শুনলাম জনৈক আনছার কমান্ডার আনোয়ার জংকে আওয়ামী লীগ থেকে সাভারে এম পি,এ(মেম্বার অব প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্ট) হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে!এম,এন,এ,(মেম্বার অব ন্যশনাল এসেম্বলি) হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন ধামরাইয়ের খন্দকার মো: নুরুল ইসলামকে।ঐ সময় সাভার ও ধামরাই দুই থানা মিলে একজন ন্যশনাল এসেম্বলিতে দাড়াতো। কে,এম নুরুল ইসলামের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ধামরাইয়ের আতাউর রহমান খান। এছাড়াও ন্যাপ থেকে দেওয়ান মো: ইদ্রিস, মুসলিম লীগ থেকে আজগর হোসেন আনোয়ার জংয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মনোনয়ন পায়।এখানে উল্লেখ্য আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র এম এ পাশ করা ঘুঘুদিয়ার সিরাজ ভাই অথচ মনোনয়ন
পেলেন অশিক্ষিত আনোয়ার জং। সিরাজ ভাই রাগ করে রাজনীতিই ছেড়ে দিয়েছিলেন।
যাক সে কথা ১৯৭০ নির্বাচনে আশরাফ উদ্দিন খান ইমু ও আমি আনোয়ার জংয়ের নির্বাচনে বিশেষ ভুমিকা রেখেছিলাম, কারন আনোয়ার জং বক্তৃতা করতে পারতেন না।আমরা দুইজন অনেক চেষ্টা করে কিছু শিখিয়ে দিয়েছিলাম।নির্বাচনে আনোয়ার জং বিপুল ভোটে জয় লাভ করে পক্ষান্তরে আজগর হোসেনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।(চলবে)