সাইদুর রহমান রিমন : বিশিষ্ট কলামিস্ট পীর হাবিবুর রহমানের বাসার গৃহকর্মি সংক্রান্ত তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে দুই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরাই তুলকালাম বাধিয়েছে। শান্ত সাভাবিক পরিবেশে হঠাত করেই দুই দল কিশোর উত্তরা চার নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডে ঢুকে এলোপাতারী হামলা চালায় এবং বেপরোয়া ভাংচুর করতে থাকে। একপর্যায়ে তারা পুলিশের গাড়িতেও হামলা চালায় এবং বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে আহত করে। এরপরই পুলিশের সঙ্গে হামলাকারীদের সংঘর্ষ বেধে যায় এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোঁড়ার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রগুলো জানায়, উত্তরায় প্রভাবশালী এক নেতার ভাতিজা মিথুনের নেতৃত্বাধীন কিশোর গ্যাংয়ের শতাধিক সদস্য ছাড়াও পাঁচ নম্বর সেক্টরের জনৈক আলআমিন গ্যাংয়ের আরো অর্ধ শতাধিক বখাটে ওই হামলায় অংশ নেয়। স্থানীয়রা জানান, কোনো ঘটনার খবর পেলেই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা সেখানে জড়ো হয়ে দাপট দেখিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে এবং মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজি চালিয়ে থাকে। উত্তরার সেক্টর এলাকাসমূহে হরহামেশাই এসব ঘটে চলছে বলেও অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা।
উত্তরার সংবাদকর্মি সাকিবুল হাসান মিঠু বলেন, "গৃহকর্মি চিৎকারের ঘটনায় সেখানে সবার আগে আমি গিয়েছিলাম এবং পৌঁছেই ভবনটি থেকে উত্তরা পূর্ব থানার এসআই জিল্লুর রহমানকে নেমে আসতে দেখি। তাকে জিজ্ঞাসা করতেই আমাকেসহ উপস্থিত মানুষজনকে উদ্দেশ্য করে তিনি জানান, মেয়েটা ভালো আছে, তার শরীরে কোনোরকম নির্যাতনের চিহ্ন নেই। মেয়েটা বাসায় একা ছিল বিধায় ভয়ে কান্নাকাটি করেছিল। "
সাকিবুল আরো জানান, 'পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানতে পাই, বিকেল তিনটার পর পরই মেয়েটিকে তার স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ওই বাসার দারোয়ানও বলেছেন, প্রাইভেটকারে চালকের বাম পাশের আসনে বসে মেয়েটি তার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়, এসময় তার হাতে কালো একটা ব্যাগ ছিল। কিন্তু মেয়েটি বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ারও প্রায় তিন ঘন্টা পরে একদল কিশোর অকস্মাৎ ৯ নম্বর রোডে ঢুকেই এলাপাতারী ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে এবং বেপরোয়া ভাংচুর শুরু করে। এসব উস্কানিদাতাই তুচ্ছ ঘটনাটিকে তিল থেকে তাল বানিয়ে ফেলে। '
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী রেলগেট বাজারের দোকানি জানান, সন্ধ্যার পূর্ব মুহূর্তেই মোটর সাইকেল ও অটোরিকসা যোগে উত্তরদিক থেকে ৪০/৫০ জন কিশোর বয়সী ছেলেরা এসে রেলগেটে জড়ো হয়। তারা রেললাইন সংলগ্ন পশ্চিম পাশে গড়ে ওঠা উত্তরা সেন্ট্রাল ক্লাবের সামনে নানারকম উত্তেজনাপূর্ণ কথাবার্তা ও চিল্লাপাল্লা শুরু করে। একপর্যায়ে কবরস্থান ঘেষা গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকেই ৯ নম্বর রোডে যায় এবং এলোপাতারী হামলা চালায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দোকানী আরো জানান, প্রায় বিশ মিনিট ধরে চলে হামলার ঘটনা। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে পৌঁছাতেই সংঘবদ্ধ কিশোররা পুলিশের গাড়িতেও হামলা চালায়। ফলে উভয়পক্ষে সংঘর্ষ বাধে ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে।
পাঁচ তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে গৃহকর্মির চিৎকার চেচামেচির খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছানো এসআই জিল্লুর রহমান বলেন, একা একা বাসায় অবস্থান করায় ভয় পাওয়া মেয়েটিকে উদ্ধার করেই তার আত্মীয় স্বজনদের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করে তারপর আমি থানায় ফিরে যাই। সম্পূর্ণ শান্ত ছিল পরিস্থিতি, সেখানে (৯ নম্বর রোডে) দুই-একজন ভিক্ষুক মহিলা ছাড়া আর কারো অবস্থানও ছিল না। কিন্তু সন্ধ্যায় বাসাটি ঘিরে হামলা চালানোর খবর পেয়ে আবার সেখানে হাজির হই এবং মেয়েটিকে সম্পূর্ণ সুস্থ্য অবস্থায় তার আত্মীয় স্বজনের কাছে পাঠিয়ে দেয়ার কথা হ্যান্ড মাইকে বারবার প্রচার করি। কিন্তু সেসব কথা পাত্তা না দিয়ে উস্কানিদাতারা আমাদের উপরই হামলা চালাতে থাকে।
এসময় একটি টিভি চ্যানেল লাইভ প্রচারের নামে নানা রহস্যময়তা সৃষ্টি করে ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আরো উত্তেজনার ছড়িয়ে পড়ে। গুজবকে উস্কে দিয়ে বড় করে ফুলিয়ে ফাপিয়ে তোলার জন্য আইপি টিভি নামক ভূয়াদের অপকর্মকেও সংঘাত সৃষ্টির দায়ী করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। সবাই বলছিল পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে তার আত্মীয় স্বজনের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। বিষয়টি উত্তরা পূর্ব থানার এসআই জিল্লুরের কাছে জিজ্ঞাসা করলেই সুরাহা মেলে কিন্তু সে ব্যাপারে লাইভ প্রচারকারীর কোনো আগ্রহ দেখতে পাওয়া যায়নি। তাদের আগ্রহ ছিল গুজবকে ফুলিয়ে ফাপিয়ে সংঘর্ষ ছড়ানোর উস্কানি দানে।