অনলাইন ডেস্ক : ফতুল্লার ইসাদাইর এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় নিহত গার্মেন্ট কর্মী নাঈমের খুনের ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কারণ। প্রত্যক্ষদর্শী ওই যুবকের নাম লিমন (১৯)। সে মৃত নাঈমের বন্ধু এবং ওই এলাকায় একটি সিমেন্টের দোকানে কাজ করেন। এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী লিমনও ওই ঘটনায় ছুরিকাঘাতে মারাত্মক আহত হয়ে এখন চিকিৎসাধীন।
লিমনের পরিবারের অভিযোগ, খুনের ঘটনায় জড়িতদের সহযোগীরা শনিবার সকালে লিমনের বাসায় এসে শাসিয়ে গেছে এবং ছিনিয়ে গেছে তার মোবাইলটিও।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) রাতে সদর উপজেলার পূর্ব ইসদাইরের বুড়ির দোকান বলে পরিচিত এলাকার চেয়ারম্যান রোডে কিশোং গ্যাংয়ের হামলায় মারা যায় নাঈম।
নিহত নাঈম জামালপুর সদরের বায়রা পলাশতলা গ্রামের মৃত খলিল মিয়ার ছেলে। সে পূর্ব ইসদাইরের রসুলবাগ এলাকার হারাধন বাবুর ভাড়াবাড়িতে মা ও তিন বোনের সঙ্গে ভাড়া থাকতো। স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতো সে।
এদিকে আহত প্রত্যক্ষদর্শী লিমন জানায়, একই এলাকার পোশাক শ্রমিক নিহত নাঈমের (১৯) সঙ্গে ওই এলাকার আলামিনের (১৮) মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। এলাকায় একটা ডিজে পার্টির আয়োজন করতে চাচ্ছিল তারা। শুরুতে সঙ্গে থাকবে বলে মত দিয়েছিল আলামিন। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটনার কয়েক ঘন্টা আগে এই বিষয়ে কথা বলতে গেলেই তর্ক বাধে তার সঙ্গে। তর্কের এক পর্যায়ে আলামিন লিমনকে থাপ্পর দেয়। লিমনও আলামিনকে থাপ্পর দেয়। এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আশাপাশের লোকজন দুজনকে নিবৃত করলেও কয়েক ঘন্টা পরই আলামিন তার সঙ্গের দলবল নিয়ে হামলা চালায় নাঈম ও তার সঙ্গের বন্ধুদের ওপর। আলামিনের সঙ্গে এসময় তার চাচা হৃদয় ও মামা হাবিবসহ কয়েকজন অস্ত্রধারী ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শী লিমন জানায়, সে সময় নিহত নাঈম ও সেসহ ইলিয়াস ও জিসান নামে আরও দুই কিশোর ছিল। প্রথমে অস্ত্রধারীরা ধাওয়া করে ইসদাইর চেয়ারম্যান রোডের খান টাওয়ারের সামনে তাদের মারতে থাকে। এসময় আলামিনের চাচা হৃদয় নিহত নাঈমের বুকে ধারালো চাকু দিয়ে আঘাত করতে থাকলে বন্ধুকে বাঁচাতে চেষ্টা করে লিমন। অস্ত্রধারীরা এসময় লিমনের পিঠেও চাকু দিয়ে বিদ্ধ করে।
নিহত নাঈমের বন্ধু লিমন অভিযোগ করে বলেন, শনিবার সকালেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সাইফ, সালাম, শাহীনের নাম পুলিশের কাছে না বলার জন্য উজ্জ্বল নামে এক ব্যক্তি বাসায় এসে হুমকি দেন তাকে। এসময় তারা লিমনের মোবাইলও নিয়ে যায়। আহত লিমন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী থানার বড়বাইশদিয়া এলাকার দুলাল শিকদারের ছেলে। সে পূর্ব ইসদাইর বুড়ির দোকান এলাকার নান্নু দেওয়ানের বাড়ির ভাড়াটিয়া।
এদিকে নিহত গার্মেন্ট কর্মী শাকিল হোসেন নাঈমের মা নাজমা বেগম বলেন, সন্ধ্যার পর মোবাইলে কোনো এক বন্ধুর কল পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় নাঈম। নিজের মোবাইল ফোন ঘরে চার্জে রেখে যায় সে। এরপর রাত দশটারও পর তার মোবাইলে একটা কল আসে। সেই কল রিসিভ করে মা নাজমা বেগম হৈ-চৈ শুনতে পান। কয়েক সেকেন্ড পরই কলটি কেটে যায়। উদ্বিগ্ন মা প্রতিবেশীর মোবাইল ফোন দিয়ে ওই নম্বরে কল করে জানতে পারেন তার ছেলে ছুরিকাহত হয়ে হাসপাতালে। হাসপাতালেই মারা যায় তার ছেলে।
কাঁদতে কাঁদতে নাঈমের মা বলেন, ‘কেমনে কী হইছে কিচ্ছু জানি না। দুইডা কথাও শুনতে পারি নাই পোলার মুখে।’
এই ঘটনার পর এলাকায় সরজমিনে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ইসদাইর বুড়ির দোকান নামে পরিচিত এই এলাকায় একাধিক কিশোর দল (কিশোর গ্যাং) তৎপর। প্রায় সময়ই তাদের মধ্যে মারামারি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মহড়া দিতেও দেখা যায় কিশোর দলের সদস্যদের। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে সেখানে। দীর্ঘদিনের বড় ভাই, ছোট ভাই সম্বোধন, মাদক ক্রয়-বিক্রয়, এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে বিরোধের জের ধরেই এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদের নিয়ন্ত্রণ করেন নেপথ্যের প্রভাবশালী স্থানীয় কয়েকজন।
এলাকাবাসীর কথাবার্তায় উঠে এসেছে, ইয়ামিন ও নাসির নামে দুই ব্যক্তির নাম। তবে এদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি কেউ। এই প্রসঙ্গ তুললেই নিরব হয়ে যান তারা।
অপরদিকে এই ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার হয়েছে হৃদয় ও হাবিব। তারা সম্পর্কে একে অপরের বেয়াই। এই মামলার অন্য চার আসামি আলামিন, সাইফ, সালাম, শাহীন পলাতক।
গ্রেফতার হৃদয় শনিবার বিকেলে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন।
তিনি জানান, ওই ঘটনায় নিহতের মা বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামলার দুইজনকে গ্রেফতার করার পর আসামি হৃদয় আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। অন্য আসামিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।