বেগমগঞ্জে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন : দেলোয়ার ও বাদল অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার - Meghna News 24bd

সর্বশেষ


Monday, October 5, 2020

বেগমগঞ্জে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন : দেলোয়ার ও বাদল অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার



অনলাইন ডেস্ক : 

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরালের ঘটনায় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেনকে (২৬) অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। পরে তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, মামলার প্রধান আসামি নুর হোসেন ওরফে বাদলকেও (২০) গ্রেপ্তার করা হয়। 

আজ সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে র‌্যাব-১১-এর প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, ‘গতকাল রোববার গভীর রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার শিমরাইল এলাকায় একটি বাসে অভিযান চালিয়ে দেলোয়ার হোসেনকে একটি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলিসহ গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ঢাকা জেলার কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে রাতেই বাদকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয় বলে ভুক্তভোগী নারী (৩৭) মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন। ঘটনার ৩২ দিন পর গত রোববার ওই নারী বেগমগঞ্জ থানায় দুটি মামলা করেন। একটি মামলা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে, অন্যটি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে। দুই মামলাতেই নয়জনকে আসামি করা হয়েছে। এরা হলেন- বাদল, মো. রহিম, আবুল কালাম, ইস্রাফিল হোসেন, সাজু, সামছুদ্দিন সুমন, আবদুর রব, আরিফ ও রহমত উল্যা। তাদের সবার বাড়ি বেগমগঞ্জে।

মামলার এজাহারে ওই নারী অভিযোগ করেছেন, স্বামীকে বেঁধে রেখে আসামিরা তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। তারা ঘটনার ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। এক মাস ধরে তাঁরা এই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তাঁকে অনৈতিক প্রস্তাব দিচ্ছিলেন। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাঁরা ফেসবুকে ভিডিওটি ছেড়ে দেন।এই মামলায় আসামি হিসেবে দেলোয়ারের নাম নেই। এখন পর্যন্ত বাদল, আবদুর রহিম ও রহমত উল্লাহকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। রহিম ও রহমত উল্লাহকে নোয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নোয়াখালীর একটি আদালত এরইমধ্যে রহিম ও রহমত উল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরালের ঘটনায় দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের পর আজ সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে র‌্যাব-১১-এর প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম। ছবি : এনটিভি

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-১১ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম জানান, ঘটনার পর পরই র‍্যাব তাদের গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে। বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালায়। তারই অংশ হিসেবে বাসে তল্লাশি চালিয়ে প্রথমে দেলোয়ারকে এবং পরে বাদলকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাদলকে বেগমগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে আর দেলোয়ারকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হবে।

অধিনায়ক দাবি করেন, ‘দেলোয়ার ও বাদল জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন যে, ওই নারীর বিবস্ত্র ভিডিও ফেসবুকে ভাইরালের ভয় দেখিয়ে তাকে জিম্মি ও টাকা হাতিয়ে নেওয়াই ছিল মূল উদ্দেশ্য।’

আসামিরা দেলোয়ার বাহিনীর সদস্য উল্লেখ করে লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, ‘দেলোয়ার বাহিনী বেগমগঞ্জ এলাকায় মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত। তারা এলাকায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলত না। দেলোয়ারের বিরুদ্ধে এর আগে দুটি হত্যা মামলাও রয়েছে।’

এদিকে ঘটনাটি আজ হাইকোর্টের নজরে আনার পর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল বেঞ্চ ঘটনাটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থাকা ভিডিও ফুটেজ সরাতে নির্দেশ দিয়েছেন। সিডি বা পেনড্রাইভে কপি রেখে দিয়ে ফুটেজটি সরাতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওই নারীর পরিবারকে সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে নোয়াখালীর পুলিশ সুপারকে (এসপি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একইসঙ্গে ঘটনার বিষয়ে ভিকটিমের বক্তব্য গ্রহণে পুলিশের কোনো অবহেলা আছে কি না, তা অনুসন্ধান করতে একটি কমিটি করে দিয়েছেন আদালত। নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে কমিটিতে রয়েছেন জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও চৌমুহনী সরকারি এস এ কলেজের অধ্যক্ষ। ঘটনা অনুসন্ধান করে তাঁদের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

পাশাপাশি ওই ঘটনায় করা ফৌজদারি মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানিয়ে ২৮ অক্টোবর আদালতকে প্রতিবেদন দিতে বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রুলে ওই নারীকে রক্ষায় এবং দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অবহেলার কারণে বেগমগঞ্জ থানার ওসি ও বেগমগঞ্জ থানার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

 

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages