নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এবার মাধ্যমিক স্তরের শ্রেণিগুলোর বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য ৩০ কর্মদিবসে সম্পন্ন করার মতো একটি পাঠ্যসূচি করা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত এই পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইমেন্ট করতে হবে। এই অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ত্রিশ কর্মদিবসের একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস হবে। শিক্ষকেরা প্রতি সপ্তাহের জন্য একটি করে চারটি অ্যাসাইনমেন্ট দেবেন শিক্ষার্থীদের। এ বিকল্প পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আজ বুধবার দুপুরে মাধ্যমিকের বার্ষিক পরীক্ষার বিষয়ে ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে এসব তথ্য জানান।
শিক্ষামন্ত্রী আরো জানিয়েছেন, আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়টি করোনা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।
জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এবার অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষা হচ্ছে না। পরীক্ষা না দিয়ে পরবর্তী শ্রেণিতে যেতে হবে তাদের। তবে তাদের ক্ষেত্রে সনদের একটি বিষয় রয়েছে। সনদের বিষয়ে পরবর্তী সময়ে জানিয়ে দেবে। কারণ তারা কোনো সনদ পাবে না, সেটি তো হওয়া উচিত নয়।’
মাধ্যমিকে মূল্যয়নের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা অনলাইনে বা খাতায় লিখে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে পারবে। এর বাইরে শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের বাসার কাজ দেওয়া যাবে না। চার সপ্তাহে শুধু চারটি অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে শিক্ষার্থীরা বা অভিভাবকেরা সামাজিক দূরত্ব মেনে শিক্ষকদের কাছে পৌঁছে দেবেন। শিক্ষার্থীদের পূর্বের রেজাল্টে অনেকটা মূল্যায়ন হতে পারে। শিক্ষকেরা তো শিক্ষার্থীদের বিষয়ে ধারণা রাখেন। অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান, ব্যবসায় ও মানবিক বিভাগে কে কীভাবে যাবে সেটিও আমরা একটি সিদ্ধান্তে আসব।’
শিক্ষাবর্ষ বৃদ্ধির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সব পরিকল্পনাই মাথায় রাখছি। শিক্ষাবর্ষ বৃদ্ধির প্রয়োজন কিনা, সেটিও চিন্তায় রাখছি। এখন যে অবস্থায় আছি, তাতে এখনে শিক্ষাবর্ষ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীরা নতুন ক্লাসে যাবে সেটি এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত। যারা অনলাইনে ক্লাস করতে পারেনি বা করতে পারছে না, নভেম্বর-ডিসেম্বরে তাদের রিচ করার চেষ্টা করব। যারা ক্লাস করেনি, শুধু তারা নয়, যারা করেছে তাদের মধ্যেও দুর্বলদের এগিয়ে নিতে আরো বেশি ক্লাস করাতে হবে। কীভাবে সেসব ক্লাস হবে, সে পরিকল্পনাও করছি।’
সামনের বছর ভর্তির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এখন এমন অবস্থায় আমরা বলতে পারছি না একমাস পর কী অবস্থায় থাকব। ভর্তি কখন শুরু করতে পারব, কীভাবে হবে, সেটি এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অনলাইনে করব কিনা সেটিও দেখছি, কিন্তু অনলাইন সবার জন্য অ্যাকসেসেবল নয়। সুতরাং কীভাবে করব, পরবর্তী সময়ে সেটি জানিয়ে দেব।’
পলিটেকনিক কলেজগুলোর ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু তাদের হাতে কলমে শিক্ষার অনেক বিষয় আছে, তাহলে তারা এ সিদ্ধান্তের আওতায় আসবে না। তাদের বিষয়ে বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়েছে, পরে তা জানানো হবে।’
ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি এবং মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।
নভেল করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতির কারণে সম্প্রতি সরকার এ বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হবে না বলে সিদ্ধান্ত দেয়। সরকার জানিয়েছে, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার গড় ফলের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফল নির্ধারণ করা হবে।
এর আগে করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতির কারণে সরকার পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা এবং অষ্টম শ্রেণির জেএসসি ও জেডিসির পরীক্ষা বাতিল করে।
নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
তবে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও করোনার মধ্যে শিক্ষার্থীদের পাঠচর্চা অব্যাহত রাখতে এবং পাঠদানের ধারাবাহিকতা রক্ষায় অনলাইন, টেলিভিশন ও বেতারের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।