![]() |
প্রতীকী ছবি |
মাসুদ রানা : সাভার আশুলিয়ার অলিতে গলিতে পাড়া মহল্লার চায়ের দোকানে অটো রিকসার গ্যারেজে কিংবা মেসবাসায় সন্ধার পর থেকেই জমে উঠেছে ক্রিকেট খেলা নিয়ে জুয়ার বাজি।
জুয়ার আসর গুলোতে গেলে হটাৎ করেই আপনি বুঝতে পারবেন না এখানে কি হচ্ছে, দেখবেন সবাই টিভি দেখছে কিন্ত কিছুক্ষণ অবস্থান নেয়ার পরেই সব ক্লিয়ার হবে আপনার কাছে। এখানে এ বিষয়টি যেন টপসিক্রেট।
চলছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার সবচেয়ে বড় আয়োজন লীগের ড্রিম আইপিএল ক্রিকেট ম্যাচ।
আর স্যাটেলাইট আর ইন্টারনেটের বদৌলতে ঘরে বাইরে টিভিতে কিংবা মোবাইলে অনায়াসে দেখা যায় খেলা গুলো। মাঠের লড়াইয়ে ওভারের খেলায় ম্যাচের জয়-পরাজয় নিশ্চিতের লড়াই চলছে। টান টান উত্তেজনা দুই পক্ষের খেলোয়াড় ও সমর্থকদের মাঝে। এর চেয়ে ঢের উত্তেজনা বাজিকরদের মাঝে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাভারের রেডিও কলোনী, জলেশ্বর, রাজাসন, মজিদপুর, বিরুলীয়া, নামাবাজার, মুক্তি স্বরণী মোড় পাশের মহল্লা, কাতলাপুর, উলাইল, নামাগেন্ডা হেমায়েতপুর- সুইসটেক্স এর সামনে, পূর্বহাটি, শ্যামপুর, হরিণধরা, রাজফুল বাড়িয়া, জয়নাবাড়ী, আলমনগর, এছাড়াও আশুলিয়ার টঙ্গাবাড়ী,চারাবাগ, ডেন্ডাবর,পল্লীবিদ্যুৎ, বাইপাইল নামাবাজার, জামগড়া,মোল্লা মার্কেট বটতলা, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর,ইউসুফ মার্কেট, কুরগাঁও, কবিরপুর শ্রীপুর ও ভাদাইল এলাকার অলিতে গলিতে চায়ের দোকানে অটো রিকসার গ্যারেজে কিংবা মেসবাসায় সন্ধার পর থেকেই নিয়মিত জমে উঠে ক্রিকেট খেলা নিয়ে জুয়ার বাজী।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আশুলিয়ার ভাদাইলের সাধুমার্কেট এলাকার একটি চায়ের দোকানে দেখা যায় আইপিএল এর চলমান ম্যাচ নিয়ে ওভারে ৮ রান হবে বলে সহকর্মী বাবুল মিয়ার সঙ্গে বাজি ধরেছিলেন আল আমিন। বাবু মিয়া বলছিলেন ১৫ রানের বেশি হবে। আল আমিন বলেছিলেন সর্বোচ্চ আট রান। তাদের দুজনের মাঝে যে জিতবে পাবেন ৫ হাজার টাকা। ওভার শেষে বাজিতে জিতে বাবু হাতে পান ৫ হাজার টাকা। শুধু বাবু বা আল আমিনই নন আইপিএল নিয়ে মাঠের বাইরে এমন বাজিতে মজছেন বহু মানুষ। ক্রিকেট জুয়ায় জড়ানোর অভিযোগ আছে খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধেও। এছাড়া নেট দুনিয়ায় বাজি ধরা হয় এমন ১২টি সাইট বন্ধ করে দিয়েছে বিটিআরসি।
যদিও এসব সাইটের বেশির ভাগই প্রক্সি সার্ভারে চালাচ্ছে জুয়াড়িরা। আইপিএল বা স্বদেশী বিপিএল নিয়ে বছর বছর বাড়ছে বাজিকরদের তৎপরতা। ২০১৮ সালে ক্রিকেট খেলা নিয়ে বাজি ধরে ঢাকার বাড্ডায় এক শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৩ সালে বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে জুয়াড়িদের ফাঁদে পড়ে স্পট ফিক্সিংয়ে ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুল।
অভিযোগ আছে সাভার আশুলিয়া এলাকার পাড়া মহল্লার প্রায় প্রতিটি চায়ের দোকানে, অটো রিকশার গ্যারেজে বা যে কোন আড্ডায় সন্ধ্যার পর থেকে জড়ো হন ক্রিকেট জুয়াড়িরা সেখানে সবাই মিলে আইপিএল এর ম্যাচ দেখেন। আড্ডা আলোচনার সঙ্গে ওভারে ওভারে চলে জমজমাট বাজি।
প্রতি বাজিতে এক'শ থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়।
সেখানে বাজি ধরেন এমন একজন পেশায় হকার বাবু মিয়া বলেন, কয়েক বছর ধরেই ক্রিকেট খেলা নিয়ে আমি বাজি খেলি। সারা দিন কাজ করে অবসর সময়ে এখানে বসে আড্ডার ফাঁকেই চলে বাজি। কেউ হারে কেউ জিতে। এখানে আমরা সবাই যে যার কাজ সেরে যুক্ত হই চায়ের দোকানে । আমরা সবাই এই এলাকার, বাইরের কেউ আসে না।
জানা গেছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের আইপিএলে বিদেশি তারকা খেলোড়ারের ছড়াছড়ি। তাই প্রথম ম্যাচ থেকেই বাজিকররা একটু বেশিই মেতেছেন। ১৯শে সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া ড্রিম আইপিএল শেষ হবে ১০শে নভেম্বর।
আইপিএলের প্রথম দিন থেকেই চলছে ক্রিকেট জুয়া।
করোনা ভাইরাসের পার্দুভাবে দুবায়ে অনুষ্ঠিত এবারের আইপিএলের মাঠে দর্শক শূণ্য আর তাই দেশে দেশে টিভি দর্শকদের টার্গেট করেছে জুয়াড়ি রা।
করোনা কে কেন্দ্র করে বন্ধ থাকা স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও ক্রিকেট বাজিতে জড়িয়ে পড়ছে। এছাড়াও রয়েছে পোষাক শ্রমিকসহ নানা পেশার লোকজন। এমনও অভিযোগ আছে, দিন এনে দিন খায় এমন দিনমজুরও ক্রিকেট জুয়ায় জড়িত।
ক্রিকেট জুয়ায় বাজী ধরে এমন কয়েকজনের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে নানা তথ্য। নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে আশুলিয়া ডিইপিজেডের পুরাতন জোনে পোষাক কারখানায় কর্মরত একব্যক্তি বলেন, ক্রিকেট জুয়াই বলেন আর বাজি বলেন খেলাটা মূলত প্রথমে স্কুল জীবনে শুরু হয় নিজেদের ক্রিকেট খেলা থেকে। দুই দল মিলে যখন ক্রিকেট খেলতাম তখন বন্ধুরা মিলে বাজি ধরতাম। এভাবেই ধীরে ধীরে এই লাইনে আসা। এখন কর্ম জীবনে বাজি ধরাটা যেন নেশায় পরিণত হয়েছে। অনেকবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বাজি ছেড়ে দেবো। কিন্তু বাজিকরদের ফোন আসায় আবার সেই ধারায় চলে যেতে হয়।
আশুলিয়ার পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার একটি পাঁচতলা বাড়ির একটি ফ্লাট নিয়ে বেশ কয়েকজন সহকর্মী মেস হিসেবে বসবাস করি। একবার মেস ছেড়েছিলাম যাতে আর বাজি খেলতে না হয়। কিন্তু নতুন মেসে যেয়েও জড়িয়ে পড়ি বাজিতে।
বাজি খেলে লাভ হয় কিনা বেশ"ক জনের কাছে জানতে চাইলে, একজন বলেন, দুইজন যেহেতু খেলছি লাভ লসতো হবেই। তবে লাভের টাকার ভাগিদার বেশি হয়। আর লাভের টাকা যতই বেশি হোক না কেন কোনো না কোনো ভাবে তা খরচ হয়ে যায়। আরেকজন আক্ষেপ করে বলেন, বাজির টাকায় আমার কেনা মোটরবাইক চুরি হয়েছে।
ল্যাপটপ কিনলাম সেটা বিক্রি করে হারা ম্যাচের টাকা পরিশোধ করলাম।
কিভাবে টাকা লেনদেন করেন জানতে চাইলে একজন জানান, বাজিকরদের নির্ধারিত এজেন্ট এর মোবাইলে ম্যসেজ বা ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ দিয়ে বাজি ধরলে তাদের লোক এসে টাকা দিবে নিবে। তবে কোন কোন সময় সাধারণ জুয়ারিরা বাজি জিতে গেলে টাকা দেয় না বাজিগর-রা। আবার বাজিতে হেরে গেলে তারা আপনার কাছ থেকে টাকা নিতে যতরকম মেন্টাল প্রেসার আছে সব আপনার উপর প্রয়োগ করবে বাধ্য হয়েই টাকা দিবেন।
এ ব্যপারে সাভার মডেল থানার অফিসার-ইনচার্জ এ এফ এম সায়েদ মুঠোফোনে জানান, আমার কাছে কেউ এখনো কোন অভিযোগ করেনি, তবুও আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে আশুলিয়া থানার ওসি কামরুজ্জানের সাথে যোগাযোগের জন্য সরকার প্রদত্ত মোবাইল নম্বরে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তিনি অপর প্রান্ত থেকে কলটি রিসিভ করেননি ফলে তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে এ ব্যপারে প্রশাসন ও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের সম্মিলিত প্রয়াসে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য অত্র অঞ্চলে বসবাসরত এলাকাবাসী জোর দাবী জানান।