সাইদুর রহমান রিমন : দেশে সাংবাদিক নীপিড়ন-নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনা যে হারে বেড়ে চলেছে তাতে অচীরেই শুধু সাংবাদিকদের খবরা খবর ছাপানোর জন্য আলাদা দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের দরকার পড়ে কি না- সেটাই ভাবছি। প্রতিদিন আমার মেইল আর ম্যাসেঞ্জারেই সাংবাদিক নির্যাতন সংক্রান্ত ৬/৭টি চিঠি আসে। সহকর্মি সাংবাদিক বন্ধুগণ নানা নির্মমতা এবং করুণ আকুতির চিঠিগুলো পাঠিয়ে থাকেন। সেসব চিঠি পাঠ করতেও বিশেষ যোগ্যতার দরকার আছে বৈ কি! যেমন একেকটি চিঠিতে হয়রানি-নির্মমতার এমন করুণ কাহিনী থাকে যা পাঠ করতে গেলেই বারবার চোখ ভিজে উঠে। আবার কোনো কোনো চিঠির দাঁড়ি-কমা, সেমিকোলন বিহীন, মাঝেমধ্যেই শব্দ ছেড়ে লেখা পাঠ করতে রীতিমত গলদঘর্ম হতে হয়। সহকর্মি বন্ধুর ভাষা জ্ঞ্যান, বাক্য গঠনের যোগ্যতা দক্ষতা কম আছে তা আমি মনে করি না, বরং আমি ভাবতে চাই বিপদগ্রস্ত অবস্থায় তার সবকিছু এলোমেলো হয়ে পড়েছে। যাহোক, গত রাত সাড়ে তিনটার দিকে আমার ম্যাসেঞ্জারে আসা সবচেয়ে কঠিন চিঠিটি পাঠ করার দুর্ভাগ্য হলো আমার। অনেক অনেক তথ্য, প্রমানযুক্ত চিঠিখানা পাঠিয়েছেন, পঞ্চগড়ের অটোয়ারী উপজেলায় কর্মরত একজন সাংবাদিক। তিনি তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকার অটোয়ারী করেসপন্ডেন্ট এবং উপজেলা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি শাহীনের হালফিল অবস্থা তুলে ধরে করুণ আকুতি জানিয়েছেন। বিশ্বাস করুন, এই প্রথম কোনো চিঠি পড়েই আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে শাহীনের সন্তানরা তারই মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, তাদের বিপদগ্রস্ত জীবনের জন্য হয়তো বাবার সাংবাদিকতাকেই দায়ী বলে মনে করে। শাহীন এ কষ্ট যন্ত্রণা ভুলতেই পারছেন না যেন।
আমরা যারা মাঠ পর্যায়ে সংবাদকর্মি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি নানা কারণেই বহুলোক আমাদের শত্রুতে পরিনত হয়। কখনও অপরাধ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ লেখার কারণে প্রভাবশালী মহলগুলো আমাদের শত্রু হয়, আবার কখনো নিজেদের অনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে আমরা ভালো, স্বজ্জন মানুষজনকেও আমাদের শত্রুতে পরিনত করে ফেলি। তবে যেভাবেই শত্রু হোক সাংবাদিকতায় কেবলই আমার অর্জিত শত্রুকুল তৈরি হয়। অর্জিত শত্রুরা সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কুৎসা রটায়, তার উপরেই হামলা চালায়, তাকেই একের পর এক মিথ্যা মামলায় হয়রানি করে সেসবই আমাদের জানা। কিন্তু এসব শত্রু আমার স্ত্রী-সন্তানকে টার্গেট করে প্রতিশোধ নেয়ার পাঁয়তারা চালাবে-তা মেনে নেয়ার মতো প্রস্তুতি কি আমরা রাখি? মোটেও না। কিন্তু পঞ্চগড়ের অটোয়ারী উপজেলার সাংবাদিক বন্ধু শাহীন ঠিক এমনই অভাবনীয় পরিস্থিতির মুখে হতবিহবল হয়ে পড়েছেন।
অটোয়ারী উপজেলার অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, লুটপাট, মাদক সাম্ররাজ্য, সামাজিক অবক্ষয় নিয়ে অবিরাম সংবাদ লিখে আসছে শাহীন। অপরাধীরা তাকে থামাতে পারেনি, তাই কৌশল হিসেবে শাহীনের বেছে নিয়েছে শাহীনের ছেলে মেয়েকে। তার নবম শ্রেণী পড়–য়া মেয়ের জীবনটা বিপর্যস্ত করে তুলেছে। সর্বশেষ হুমকিতে দুর্বৃত্তরা জানিয়ে দিয়েছে, সাংবাদিক শাহীনের ছেলেকে কুপিয়ে কেটে, মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবে। অপরাধীরা কেউ অজানা অচেনা অজ্ঞাতনামা নয়, সবাই স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মি। তাদের বিরুদ্ধে অটোয়ারী থানায় একাধিক মামলাসহ অসংখ্য জিডি আছে। কিন্তু ছাত্রলীগের সাবেক নেতা দাবিদার ওসি ইজার উদ্দিন অটোয়ারী উপজেলা ছাত্রলীগের অপরাধী গ্রুপটার প্রতি খুবই নমনীয় এবং আস্থাশীল। এ কারণে অপরাধী ছাত্রলীগ গ্রুপের কোনো সদস্যের দিকে পুলিশের তাকানো নিষেধ। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। শাহীন অভিযুক্তদের নাম উল্লেখ করে মামলা করার পরও আসামিরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, মওকা খুঁজছে হামলা চালানোর।
প্রিয় ছাত্রলীগ সভাপতি-সেক্রেটারী
আমি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, তোমরা আমাদের প্রিয়, অতি আদরের। তোমাদের নিয়ন্ত্রিত অটোয়ারী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আইয়ুব আলী ও সম্পাদক হোসেন মোহাম্মদ সিফাতের নেতৃত্বেই অটোয়ারীতে চিহ্নিত অপরাধী গ্রুপ গড়ে উঠেছে। এতে ছাত্রলীগের কর্মি পরিচয়ে চিহ্নিত অপরাধী বহু মামলার আসামি নাজু, নাইস, হাসিনুর কবির, তারেক, পারভেজ, সাইদুর, করিম, জয়, নাইম, লিটন, রাজু, ফারুক, রতনসহ ২০/২২ যুক্ত হয়েছে একই শিবিরে। তাদের আশ্রয়ে প্রশ্রয়েই স্থানীয় গার্লস হাইস্কুলমুখী রাস্তায় রাস্তায় ছাত্রী উত্যক্তের ঘটনা ঘটে। এ গ্রুপটাই আটোয়ারী মডেল বালক উচ্চ বিদায়ের ২২টি কম্পিউটার চুরির ঘটনা ঘটায়। ছিনতাইবাজীর অভিযোগও আছে তাদের বিরুদ্ধেই। ত্রিশ-চল্লিশ জনের মটর সাইকেল বহরে প্রতিদিন তারা হাজির হয় ছাত্রলীগের ব্যানারে, এরপর সরগরম করে তোলে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ কার্যালয়টি। সেখানে গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল, ড্যান্ডি, সিরিঞ্জ সব ধরনের মাদকই চলতে থাকে রাত অবধি। তারাই সাংবাদিক শাহীনুর ইসলাম শাহীনের বিরুদ্ধে আক্রোশ খাটাতে তার স্কুল পড়ুয়া মেয়ে ও নাবালক ছেলেকে টার্গেট হিসেবে বেছে নিয়েছে। সামাজিক অবক্ষয়ের সবগুলো অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ছেলেগুলো কিভাবে ছাত্রলীগে যুক্ত হয়? নাকি ভাল ছেলেগুলো ছাত্রলীগে যোগ দিয়েই অপরাধীতে পরিনত হয়?