![]() |
ছবি : ২০ জানুয়ারি ১৯৬৯ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বুলেটবিদ্ধ রক্তমাখা শহিদ আসাদুজ্জামান আসাদের লাশ। |
রফিউর রাব্বি :
আজ শহিদ আসাদ দিবস। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি স্বৈরাচারী আইয়ুব বিরোধী গণ আন্দোলনে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনের সড়কে বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান আসাদ।
১৯৪২ সালে নরসিংদী জেলায় আসাদের জন্ম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের মাষ্টার্স করছিলেন। আসাদ পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা হল শাখার সভাপতি ছিলেন। তিনি ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ঘনিষ্ঠ অনুসারী।
১৯৬৯ এর ১৭ ই জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সিদ্ধান্ত হয় ১১ দফা দাবীতে এবং পুলিশ ও ই. পি. আর. বাহিনী কর্তৃক ছাত্র-জনতার উপর বর্বর নির্যাতন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্রতা লঙ্ঘনের প্রতিবাদে ২০ জানুয়ারি পূর্ণ হরতাল পালন করা হবে। হরতালের অংশ হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের সকল স্কুল, কলেজে ধর্মঘট পালিত হয়। গভর্নর মোনায়েম খান ২০ জানুয়ারি ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে। পাকিস্তান পুলিশ থেকে বলা হয় শহরের কোথাও চার জনের বেশি লোক একসাথে হলে তাদের গ্রেফতার করা হবে। ২০ তারিখ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিভিন্ন কলেজের ছাত্ররা মিছিল সহ জড়ো হয়। ১১ দফা দাবিতে শহরে প্রায় ১০ হাজার ছাত্রের এক বিশাল মিছিল ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে । মিছিলটি তৎকালীন পোষ্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল ইনস্টিটিউটের সামনের সড়কে এসে পৌছলে সেখানে পুলিশের বাধার সুখে পড়ে। পুলিশের সাথে সংঘর্ষের প্রায় এক ঘণ্টা পর আসাদ সহ কিছু ছাত্র আবার মিছিল সংঘটিত করে ঢাকা হলের পাশে দিয়ে যাবার চেষ্টা করে। তখন একজন পুলিশ অফিসার আসাদকে বেয়নেট দিয়ে আহত করে রাস্তায় ফেলে দেয় এবং তাকে খুব কাছে থেকে গুলি করে। পুলিশের গুলিতে ঢাকা মেডিকেলের বর্তমান জরুরী বিভাগের সামনে আসাদ শহিদ হন।
ছাত্রনেতা আসাদের মৃত্যুর খবর খুব দ্রুত সারা শহরে দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে। হাজার হাজার ছাত্র জনতা ঢাকা মেডিকেল কলেজে ছুটে আসে। অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবার আশঙ্কায় পুলিশ আসাদের লাশ সরিয়ে ফেলে। আসাদের রক্তমাখা সার্ট
নিয়ে মিছিল বের হয়। আসাদ হত্যার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশাল মিছিল বের হয়। বিভিন্ন শিক্ষ প্রতিষ্ঠান, পাড়া মহল্লা থেকে বের হয় অসংখ্য শোক মিছিল। ঢাকা শহর প্রদক্ষিণ করার সময় সাধারণ মানুষ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই মিছিলে যোগ দেয়। অনেকেই মনে করেন দুই মাইল লম্বা সেই মিছিল ছিল ইতিহাসের অন্যতম দীর্ঘ মিছিল। শোক মিছিল শহিদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। পূর্ব পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটি শহিদ আসাদের হত্যার প্রতিবাদে তিন দিনের শোক ঘোষণা করে। ২৪ তারিখ হরতাল দেওয়া হয়। সেই দিন আবারও মিছিল লক্ষ করে পুলিশ গুলি করে। পুরো পরিস্থিতি গভর্নর মোনায়েম খানের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। তুমুল গণ আন্দোলনে ২৪ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট আয়ুব খান পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
বিক্ষুব্ধ প্রতিবাদী জনতা বিভিন্ন স্থানে আয়ুব খানের নামের স্থাপনা ভেঙ্গে সেখানে শহিদ আসাদের নাম লাগিয়ে দেন। সংসদ ভবনের ডান পার্শ্বে অবস্থিত লালমাটিয়ার তোরণটি আইয়ুব গেট থেকে নাম পরিবর্তন করে আসাদগেট হয়ে যায়। আইয়ুব এভেনিউ এর নাম হয় আসাদ এভেনিউ।
আসাদ স্মরণে অসংখ্য কবিতা লেখা হয়। শামসুর রাহমান লিখেন 'আসাদের শার্ট', হেলাল হাফিজ লিখেন 'নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়', শহীদুল্লা কায়সার 'সমুদ্রে যখন ঝড় উঠে', আ ন ম গোলাম মোস্তফা লিখেন 'কবরের ঘুম ভাঙে'।