গাজীপুর প্রতিনিধি : দীর্ঘদিন লকডাউন ও ঈদের ছুটিসহ নানা সুযোগে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বনের জমি দেদারছে হয়েছে জবর-দখল। নিমার্ণ করা করা হয়েছে অবৈধ ছোট-বড় স্থাপনাসহ শত শত বহুতল ভবনসহ টিনসেড বাড়িঘর। এসব দখল ও স্থাপনা নির্মাণে স্থানীয় বন অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই ‘মিউচুয়াল’ ডিমার্গেশনের নামে দখলদারদের সহযোগীতা করার অভিযোগ উঠেছে। বিনিময়ে তারা হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। এতে অচিরেই বনভুমি ও জীববৈচিত্র হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহলের লোকজন।
এলাকাবাসী, স্থানীয় বন অফিস ও জবর-দখলকারী সূত্রে জানা গেছে, প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাওয়ায় সারা দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। আর এ ভাইরাস সংক্রমণ রোধে জনসমাগম কমাতে কয়েক দফায় দেশে লকডাউন ঘোষণা করে বর্তমান সরকার। কিন্তু এ লকডাউনের তোয়াক্কা না করলেও দেশ যেন স্থবির হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে যোগ হয়েছিল ঈদের ছুটি। লকডাউন ও ঈদের ছুটিসহ নানা সুযোগে বনখেকোরা কালিয়াকৈরের চন্দ্রা বন বিট অফিসের আওতায় বনের জমি জবর-দখলে মেতে উঠে। নির্মাণ করা হয়েছে শত শত ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, ঘর-বাড়ি, গজারি গাছ কেটে রাস্তাসহ প্রায় শতাধিক বহুতল ভবন। রয়েছে জবর-দখল করে বনের জমি বিক্রি করার অভিযোগও। গত কয়েক দিন ঘুরে উপজেলার সুরিচালা, কালামপুর, বোর্ডমিল, মাটিকাটা, সিনাবহ, চান্দরা, পূর্বচান্দরা, পল্লীবিদ্যুৎ,পশ্চিম চান্দরা (কারিকর পাড়া), বিশ্বাসপাড়া, মন্ডলপাড়া, বাড়ইপাড়া, হাবিবপুর, বক্তারপুর এলাকা ঘুরে বনের জমি জবর-দখল করে এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের চিত্র দেখা গেছে। কালামপুর এলাকায় হাসান, খোরশেদ ও একজন কলেজ শিক্ষক বহুতল ভবন নির্মাণ করেন। বিশ্বাসপাড়া এলাকায় আব্দুল হাকিম, মিজান, শিমু বেগম, মোস্তাফিজুর রহমান বহুতল ভবন নির্মাণ করেন। মন্ডলপাড়া এলাকায় রেখা বেগম টিনসেড বিল্ডিং, পলান ও লালন বহুতল বিল্ডিং নির্মাণ করেন। পশ্চিম চান্দরা (কারিকর পাড়া) এলাকায় আনোয়ার হোসেন, তরফ আলী, নাজমুল করোনা কালীন সময়ে বনের জমিতে বিট অফিসে টাকা দিয়ে বাড়ীঘর নির্মান করেছে। এছাড়া বিশ্বাসপাড়া এলাকায় জাহাঙ্গীর আলম নামে এক ব্যক্তি বনের জমি জবর-দখল করে কলোনী তৈরি করে। পরে কলোনীসহ ওই বনের জমি অপর এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। শুধু এরাই নয়, ওই বন বিট অফিসের আওতাধীন বিভিন্ন স্থানে এভাবেই বনের জমি জবর-দখল ও গজারি গাছ কেটে নিমার্ণ করা হয়েছে নানা অবৈধ স্থাপনা। এতে একদিকে যেমন বেদখল হচ্ছে বনভুমি ও অপরদিকে হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, চন্দ্রা বিট কর্মকর্তা শরিফ উর রহমান খান এ বিট অফিসে যোগদানের মাত্র দুই মাসেই সবচেয়ে বেশি বনের জমি জবর-দখর ও অবৈধ স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। এভাবেই বেদখল হতে থাকলে অচিরেই ধব্বংস হয়ে যাবে বনভুমি ও জীববৈচিত্রও। তবে বনের জমি জবর-দখলকারীরা জানিয়েছেন, স্থানীয় দালাল চক্র ও বন অফিসে মোটা অংকের টাকা দিয়েই তারা এসব কাজ করছেন। তাদের টাকা দিলে কোনো ডিমার্গেশনের দরকার পড়ে না। টাকা পেয়ে বনের লোকজনের মাধ্যমেই মিউচুয়াল ডিমার্গেশন করা হয়।
মিউচুয়াল ডিমার্গেশনের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় চন্দ্রা বিট কর্মকর্তা শরিফ উর রহমান খান চৌধূরী জানান, ডিমার্গেশন মানে দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। তাই লোকজন কিছু টাকা-পয়সা খরচ করে মিউচাল ডিমার্গেশনের মাধ্যমে কাজ করে থাকে। তবে নির্মাণাধীন তালিকা চেয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে।