মানিকগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের মুখে ফাইল ছুড়ে মারার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি ঘটিয়েছে দৌলতপুর উপজেলায় কর্মরত উপ সহকারী প্রকৌশলী রনজিত কুমার পাল। এ বিষয়ে উপজেলার ১৮টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবর একটি লিখত অভিযোগ দেন ।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, দৌলতপুর উপজেলার ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেরামত কাজের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় । এ কাজে সহযোগিতার জন্য সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তরে গেলে প্রধান শিক্ষকদের সহযোগিতার পরিবর্তে অজ্ঞাত কারণে বিভিন্ন রকমের হয়রানি বা অপদস্থ হতে হয় বলে অভিযোগ করেন দৌলতপুর উপজেলার ১৮ প্রাথমিক বিদ্যালযের প্রধান শিক্ষকবৃন্দ ।
দৌলতপুর উপজেলার ১৮ জন প্রধান শিক্ষক লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, গত ২৮ জুন কাকনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় মেরামত কাজের সহযোগিতার জন্য দৌলতপুর উপজেলা উপ সহকারী রনজিত কুমার পালের নিকট উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত ফাইল উপস্থাপন করলে তিনি ফাইলটি কাকনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের মুখের উপর ছুড়ে মারেন এবং খারাপ আচরণ করেন। এছাড়াও ৩৪নং বাচামারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরেকজন উপ সহকারী প্রকৌশলী আবু সাইদ এর নিকট মেরামত কাজের ফাইল উপস্থাপন করলে তিনি মোটা অংকের টাকা দাবী করেন বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন। তিনি আরো উল্লেখ করেন টাকা না দিলে তিনি কোনো ভাবেই ফাইল এ সহায়তা করবেন না বলে তাকে জানান।
অভিযোগের বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা প্রকৌশলীর বক্তব্য নিতে গেলে তিনি এ অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি। তিনি আরও বলেন আমাদের মিডিয়ায় কথা বলতে পারমিশন লাগে। আমরা পারমিশন ছাড়া বক্তব্য দিতে পারবো না।
অভিযুক্ত উপ সহকারী প্রকৌশলী রনজিৎ কুমার পাল এর বক্তব্য নিতে অফিসে যাওয়া হলে তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। তাকে কয়েকদিন মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে গত সোমবার পাওয়া যায়। মুঠোফোনে শিক্ষকদের অভিযোগের বিষয়ে তাকে বলা হলে তিনি বলেন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ভিত্তিহীন। তারা কাজ না করে টাকা চেয়েছিলো কিন্তু আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখি কোনো কাজ হয়নি। তাই তারা আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।
আরেক অভিযুক্ত উপ সহকারী প্রকৌশলী আবু সাইদ বলেন আমি টাকা চাইবো কেন। আমি উনাদের বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখেছি উনারা কাজ করেনি । আমি বিল দিতে অস্বীকার করায় তারা আমার নামে এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষকরা জানান, আমরা মেরামত কাজের নির্ধারিত সময়ের আগেই ফাইল নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী অফিসে গিয়েছিলাম কিন্তু আমরা উপ সহকারী রনজিৎ কুমার পাল ও আবু সাইদের দ্বারা অপমানিত হই । তারা আমাদের উপর ফাইল ছুড়ে দেয় এবং আবু সাইদ মোটা অংকের টাকা দাবি করেন ।
অভিযোগের বিষয়ে আহলিয়া রোকেয়া বেগম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, আমি বিদ্যালয়ের মেরামতের কাজ করেছি কিন্তু আমি বিল পাই নাই তারা আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করেছে । আমি টাকা না পেয়ে সুদে টাকা ধার নিয়ে বিল শোধ করেছি ।
এ বিষয়ে ২৭নং কাকনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দ্রি প্রসাদ গোস্বামী বলেন, আমার নিজের টাকায় আমি বিদ্যালয়ের অর্ধেক কাজ শেষ করেছিলাম কিন্তু আমি মেরামতের কোনো টাকা পাই নাই তাই আর বাকী অর্ধেক কাজ শেষ করতে পারি নাই । আমি মেরামতের কাজের ফাইল নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী অফিসে গেলে রনজিৎ কুমার পাল আমার মুখের উপর ফাইল ছুড়ে মারেন এবং খারাপ ভাবে বকাবকি করেন ।
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম রাজা বলেন – আমার বরাবরে কয়েকজন প্রধান শিক্ষক লিখিত ভাবে অভিযোগ করেছেন। আমি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি । যদি ঘটনা সত্য হয় তবে এর সঠিক বিচার হওয়া দরকার।