গাজীপুর প্রতিনিধি : সাংবাদিক সাইনবোর্ড টানিয়ে অফিসের ভিতরে চালানো হতো অশ্লীল নিত্য, ইয়াবা সেবন, দেহ ব্যবসা, চাকুরি দেয়া, টাকার বিনিময় ভুয়া সাংবাদিক তৈরির কারখানাসহ অপরাধ মুলক নানা কর্মকান্ড। অবশেষে ৯৯৯-এ ফোনে এমন প্রতারণার অভিযোগে ভুয়া দুই সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায়। বুধবার দুপুরে গ্রেপ্তারকৃত ওই দুজনকে গাজীপুরে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- জয়পুরহাটের কানাই থানার বেগমগ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে মাসুদ রানা ওরফে অপূর্ব (৩৫) ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানা বারো কাউনিয়া এলাকার জসিম উদ্দিনের মেয়ে আরিফা আক্তার মীম (১৯)।
এলাকাবাসী, ভুক্তভোগী নারী-পুরুষ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই কথিত সাংবাদিক অপূর্ব ও তার সহযোগী আরিফা আক্তার মীম গত ৩/৪ মাস আগে কালিয়াকৈর পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় ওয়াহিদুজ্জামানের ওয়েসিস ভবনের একটি ভবনের চারতলায় অফিস ভাড়া নেয়। এরপর তারা ৫ হাজার থেকে ৩৬ হাজার পর্যন্ত টাকা নিয়ে কয়েকজন নারী-পুরুষ নিয়োগ করে। তাদের ৫ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা করে বেতন দেওয়ার নামে প্রতারণা করেন অপূর্ব ও তার সহযোগী মীম। ওই অফিসের চাকচিক্য দেখে বুঝার উপায় নেই এটা ভুয়া অফিস। পর্যায়ক্রমে সেনেটারী মিস্ত্রি, হোটেল বয় ও কারখানার শ্রমিকদের কাছ থেকেও ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার করে টাকা নিয়ে ভুয়া সাংবাদিক তৈরি করেন অপূর্ব ও তার সহযোগী মীম। দেওয়া হয় একুশে সংবাদ পত্রিকার নামে ভুয়া সাংবাদিক কার্ডও। তাদেরও বেতন দেওয়ার কথা জানানো হয়। শুধু তাই নয়, অফিসের ভিতরেই চলাতেন অশ্লীল নিত্য, ইয়াবা সেবন, দেহ ব্যবসা, কারখানায় চাকুরি দেওয়ার কথা বলেও হাতিয়ে নিয়েছে হাজার হাজার টাকা। এ ছাড়াও বিভিন্ন কারখানায় চাকুরি দেওয়ার কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে নিরিহ লোকজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন। কিন্তু তিন মাস পেরিয়ে গেলেও বেতন না পেয়ে ভুক্তভোগী কয়েকজন তরুণ গত দুদিন আগে মৌচাক পুলিশ ফাঁড়িতে ভুয়া সাংবাদিক তৈরির কাড়িগর অপূর্ব ও তার সহযোগী মীমের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করেন। তারপরও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী তরুণ-তরুনিরা। গত মঙ্গলবার বিকেলে ওই তরুণ-তরুনিরা তাদের বকেয়া বেতনের দাবীতে ওই অফিসে যান। এসময় অফিসের ভিতরে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে অপূর্ব ও তার সহযোগী ওই তরুণদের নামে ধর্ষণ মামলা করার হুমকি দেওয়া হয়। তাদের হৈচৈ শুনে আশেপাশের লোকজন ছুটে গিয়ে ওই ভূয়া সাংবাদিক অপূর্ব ও তার সহযোগী মীমকে আটক করে। পরে ভুক্তভোগীরা ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের দুজনকে আটক করে। এসময় তাদের কাছ থেকে অর্ধশত নকল আইডি কার্ডসহ বিভিন্ন কাগজপত্র জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় দেলোয়ার নামে এক ভুক্তভোগী ওইদিন রাতেই কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরের দিনে গতকাল বুধবার দুপুরে গ্রেপ্তারকৃত দুজনকে গাজীপুর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে কালিয়াকৈর থানার ওসি (তদন্ত) আবুল বাশার জানান, এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরে গ্রেপ্তারকৃতদের জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।