দলবাজরা সাংবাদিকতা ছাড়ুন : সাইদুর রহমান রিমন - Meghna News 24bd

সর্বশেষ


Tuesday, May 10, 2022

দলবাজরা সাংবাদিকতা ছাড়ুন : সাইদুর রহমান রিমন



সাইদুর রহমান রিমন: রাজনৈতিক সাংবাদিকতা যেমন নিষিদ্ধ নয়, তেমনি রাজনীতি করে সাংবাদিকতা কিংবা সাংবাদিকতা করে রাজনীতি করাও নিষিদ্ধ হতে পারে না। তবে তার রাজনীতির প্রভাব সাংবাদিকতায় না পড়লেই চলে। কিন্তু যে দেশে রাষ্ট্র, সরকার আর দলকে আলাদা করে দেখা কষ্টকর, সেদেশে রাজনৈতিক দলের নেতা দলীয় প্রভাবমুক্ত সাংবাদিকতা করবেন তা আশা করাও অবান্তর। এক্ষেত্রে দলবাজ মানুষ তার সাংবাদিকতাকে দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবেই ব্যবহার করে থাকেন। তাছাড়া সাংবাদিক কাম রাজনৈতিক নেতা হিসেবে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলেই বেশি সিদ্ধহস্ত তারা। আমি মনে করি, দলবাজির সাংবাদিকতা নৈতিক হলে নিশ্চয়ই দলীয় মুখপত্র প্রকাশের বিধানটি থাকতো না। যারা দলীয় নেতৃত্বের পাশাপাশি সাংবাদিকতাকেও ধরে রাখতে চান তাদের জন্য দলীয় মুখপত্রে যুক্ত থাকাটাই বেশি যৌক্তিক।

বাংলা ভূখন্ডে ৬১ বছর আগে সাপ্তাহিক সোনার বাংলা এবং ৪৮ বছর আগে দৈনিক সংগ্রাম প্রকাশের মধ্য দিয়ে দলীয় মুখপত্র প্রকাশের সূচণা ঘটে। পরবর্তীতে যুবলীগের মুখপত্র হিসেবে বাংলার বাণী এবং বিএনপির পক্ষে দৈনিক দিনকাল প্রকাশের মধ্য দিয়ে দলীয় মুখপত্রের ব্যাপ্তি ঘটে দেশে। আর বর্তমানে অঘোষিত ভাবে সিংহভাগ পত্রিকাই কোনো না কোনো দলের লেজুরবৃত্তি করে থাকে, যা পাঠকদের সঙ্গে সুক্ষè কারচুপি পর্যায়েই পড়ে। পাশ্ববর্তী ভারতেও পত্রিকা পাঠকদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের এহেন কারচুপির নজির নেই। সেখানে পত্রিকার প্রথম পাতার শীর্ষে স্পষ্টভাবে ছাপানো থাকে : ‘বাংলা ভাষায় সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক’ কিংবা ‘দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রচারিত পত্রিকা’ হিসেবে। কিন্তু বাংলাদেশে ‘প্রচার সংখ্যায় শীর্ষে’ বা ‘সর্বাধিক প্রচারিত’ শব্দটি ছাপা হয় অন্তত আটটি জাতীয় দৈনিকে। এটা পাঠকদের সঙ্গে রসিকতা নাকি প্রতারণা? দলীয় লেজুরবৃত্তির ক্ষেত্রেও অভিন্ন চিত্র বিদ্যমান।

বেশ কয়েকটি সংবাদপত্র সরাসরি দলের মুখপত্র আকারে প্রকাশ করলেও তা পাঠকদের জানিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন। অর্থাত নিরপেক্ষতার ভান ধরে দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন তারা। এ পরিস্থিতিতে মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিকগণও নিরপেক্ষতার ছদ্মাবরণে দলবাজির সাংবাদিকতায় আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকার সক্ষমতা প্রদর্শণ করে চলছেন। 

দলবাজ সাংবাদিকতা নিয়ে শরীফ মুহাম্মদ এর গুরুত্বপূর্ণ লেখাটির সংক্ষিপ্ত রুপটিও বেশ কঠিন। দলবাজ সাংবাদিক। এটা একটা পরিচিতিমূলক শব্দবন্ধ। যে সাংবাদিক দলবাজি করে তার জন্য এবং তাকে এটা বলা হয়। অর্থাৎ তার আসল পরিচয় সাংবাদিক, এর সঙ্গে সে কিছুটা দলবাজিও করে। আরেকটা হচ্ছে, মিডিয়াবাজ দলীয় কর্মি। এই লোকটা আসলে সাংবাদিক না, তার প্রধান পরিচয় হলো সে দলের অন্ধ-কর্মি। তবে দলবাজি করার জন্য সাংবাদিকতার অঙ্গনটাকে সে বেছে নিয়েছে। 

সাংবাদিকতায় দলবাজির চর্চাটা আগে থেকেই ছিল। কিছু রাজনৈতিক অন্ধ কর্মি ও টাউট যেন সাংবাদিকতায় ঢুকে গেছে! দলবাজির ‘হক’ আদায় করেই সফল সাংবাদিক হয়ে যাচ্ছে তারা! অপরদিকে যে লোকটা আগাগোড়াই অন্ধ রাজনৈতিক কর্মি, ধান্ধা, পেশা ও জীবিকার ক্ষেত্র হিসেবে সাংবাদিকতাকে বেছে নিয়েছে, সাংবাদিকতা কেবলই তার ব্যবহারের বিষয়। এক সময় দেশে দল ও রাজনীতির সাথে যুক্ত সাংবাদিক থাকতো, এখন সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত অন্ধ রাজনীতিকের ভিড় বেড়ে গেছে। সাংবাদিকতা ও দলবাজির এই বিকৃত বিবর্তন ‘পোকায় খাওয়া সাংবাদিকতা’কে কোথায় নিয়ে ফেলবে সেটাই দেখার বিষয়।

কাজল ভোমরা’র পোস্টে আরো স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয় দলবাজ সাংবাদিকতাকে। তিনি বলছিলেন, “সাংবাদিকরা নির্লজ্জ দালালী ছাড়ুন আর দলকানা দালালরা সাংবাদিকতা ছাড়ুন” লিখে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছিল। তারপর আবারো বলছি, হয় সাংবাদিকতা করুন, নইলে দালালী করুন। দল কানা সাংবাদিকদের কারণে মহান পেশার আজ বারোটা বেজে গেছে। অনেকে এতটাই দলবাজ হয়ে গেছেন যে, স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী কালো আইন পাশ হওয়ার পরও মুখে কুলপ এটে বসে থাকেন। অথচ, এ আইন নির্দ্দিষ্ট কোনো দলের সাংবাদিকদের জন্য প্রযোজ্য নয়। বরং সবার জন্যই কালো আইন। আজ যারা চুপ করে আছেন এমন একটা সময় আসবে যখন এ কালো আইন আপনার বিরুদ্ধেই প্রয়োগ করা হবে।

তথ্যমন্ত্রী থাকাবস্থায় হাসানুল হক ইনু এমপি বলেছিলেন, যারা সাংবাদিকতার নামে লেজুরবৃত্তি করে দলভারি করছেন তারা গণমাধ্যম ছেড়ে যে কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দিন। বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। প্রয়াত সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমান তার জীবদ্দশায় ক্ষোভের সঙ্গে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। সেখানে লিখেন: দেশে সুবিধাবাদী সুযোগ সন্ধানী দলকানা অযোগ্য সাংবাদিকরাই পেশার প্রতি মানুষের মর্যাদা নষ্ট করেছে। এসব মেরুদন্ডহীন সাংবাদিকরা কোথাও চাকরি বাকরি না পেয়ে এই পেশায় এসে যোগ্যতা প্রমানে ব্যর্থ হলেও দলবাজি সুবিধাবাদিতায় চাকরিটা করে যাচ্ছে। এদের পাঠক চিনে না। চিনে ক্ষমতার পাপোষ বা কেরানিগন। কেরানি কেরানি মাসতুতো ভাই। দুই দলে বিভক্ত গনমাধ্যমে এসব অযোগ্যদের নিরাপদ আশ্রয় আছে।

ওমর আলী সোহাগের মন্তব্য হচ্ছে, ইত্তেহাদ থেকে ইত্তেফাক এবং মানিক মিয়া। তখন আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হিসাবেই আনা হয়। যার হকার পর্যন্ত ঠিক করে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত আত্মজীবনী ও বাংলাদেশের সংবাদ পত্রের ইতিহাস তাই বলে। মিজানুর রহমান বলছিলেন, পত্রিকার মালিকগণ যদিও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত। তবুও স্বাধীনভাবে নিরপেক্ষ রিপোর্ট তৈরি করতে বেশিরভাগ সম্পাদকগণই আদেশ জারি করে থাকেন। স্বাধীনভাব আর নিরপেক্ষতা বজায় থাকেনা শুধু মফস্বলেই। কেননা, বহু পাকনা পাকনা টাউট বাটপারেরা রাজনীতির পাশাপাশি একটি পত্রিকার কার্ড পেয়েই স্বপ্নকে বাস্তবে রুপান্তরিত করতে জাল নকসা আঁকতে থাকে। তার কুৎসিত চরিত্রটি সবার চোখে ধরা খাবার আগেই হয়ে ওঠে প্রকৃত সাংবাদিকদের জন্য কঠিন প্রতিরোধ্য এক শয়তান।

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages