নিজস্ব প্রতিনিধি(সাভার): এইচএসসি পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে টাঙ্গাইল রেসিডেনসিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ বলেন, ‘আপনারা নিউজ করবেন, নিউজ করেন গিয়ে। এতো প্যাচানোর দরকার নেই। এরপরে আমার কাছে যারা টাকা খায় আমি তাদের সঙ্গে বুঝবো।’
এ ধরনের উত্তরে উপস্থিত সংবাদকর্মীরা অবাক হয়ে যান। তিনি উচ্চস্বরে সবাইকে বোঝাতে থাকেন যে, শিক্ষা অফিসার ও সাংবাদিকরা তার কাছ থেকে টাকা নেয়। তিনি এভাবেই সব ম্যানেজ করে থাকেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জানান, ২০২২ শিক্ষা বর্ষের এইচএসসি পরীক্ষায় ফরম ফিলাপ ফি আনুষঙ্গিক খরচসহ বোর্ড নির্ধারণ করে দিয়েছে। এরমধ্যে মানবিক ১৭৭০ টাকা, ব্যবসায়িক শাখা ১৭৭০ টাকা, বিজ্ঞান ২৩৩০ টাকা করে নেয়ার নিয়ম রয়েছে। অথচ টাঙ্গাইল রেসিডেনসিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে ঘোষণা দেয়া হয় সর্বসাকুল্যে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা লাগবে ফরম ফিলাপ করতে।
হঠাৎ করে কলেজের এ ধরনের ঘোষণায় শিক্ষার্থীরা বিপাকে রয়েছে। ফরম ফিলাপের ফি কমাতে বললেও কলেজ কর্তৃপক্ষ সেদিকে কর্ণপাত করেনি। যে কারণে রশিদের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
মানবিক শাখার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, স্যারকে বলেছি কিছু টাকা কমানোর জন্য। কিন্তু স্যার বলেন, এইটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আমি যা বলব তাই হবে। কোন টাকা কম হবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন যে, কলেজ নির্ধারিত এই টাকা নাকি বাধ্যতামূলক। এ টাকা দিতেই হবে, না দিলে ফরম ফিলাপ করা হবে না।
এ সময় শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করে বলেন, টাঙ্গাইল রেসিডেনসিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ ফরম ফিলাপের ব্যাপারে বলেছেন, কোনো ছাড়া ছাড়ি নেই, দিতেই হবে এই টাকা।
টাঙ্গাইল রেসিডেনসিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের নিচতলায় অফিস কক্ষে এই প্রতিবেদক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সেজে কর্তব্যরতদের ফরম ফিলাপের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তারা জানান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ৮ হাজার এবং বিজ্ঞানে সাড়ে ৮ হাজার টাকা ফরম ফিলাপের জন্য দিতে হবে। কি কারণে এই অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে তার কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেন নি কর্তব্যরতরা।
এ ব্যাপারে কয়েকজন সংবাদকর্মীরা সাক্ষাৎকার নিতে গেলে টাঙ্গাইল রেসিডেনসিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ তাদের উপর চড়াও হন এবং অশালীণ আচরণ করেন। এর আগেও নাকি এই প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিক হয়রানীর মত ঘটনা ঘটেছে বলে জানান অনেক সংবাদকর্মী। স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা ও সরকারি অফিসারদের নাকি ম্যানেজ করে চলেন আব্দুল লতিফ। এ জন্য বারবার অনিয়ম করলেও তারা শিক্ষার নামে চুটিয়ে ব্যবসা করে আসছেন।
এমন অভিযোগও করেন সচেতন অভিভাবকরা।
আব্দুল লতিফ আরও জানান, শিক্ষা অফিসার ও সাংবাদিকদের তিনি লালন-পালন করেন। তিনি অনিয়ম করলেও বলার কেউ নেই। তার কাছে সবাই টাকা নেয়। তিনিও টাকা দিয়ে এগুলো ম্যানেজ করে রাখেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে এ বিষয়ে সাভার উপজেলা শিক্ষা অফিসার কামরুন নাহার বলেন, প্রতিটি কলেজে অতিরিক্ত ফি না নিতে চিঠি দিয়ে অবগত করা হয়েছে। এরপরেও কেউ অতিরিক্ত ফি নিলে সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের জানাতে পরামর্শ দেন তিনি।
সচেতন অভিভাকরা জানান,সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসারের তদারকির অভাবে প্রতিবছরই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সমাধান মিলছে না। আইন বা ঘোষণা শুধু টিঠিতেই সীমাবদ্ধ রয়ে যায়। বাস্তবে কোন স্কুল বা কলেজে গিয়ে কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে দেখেনি কেউ।